বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান রাজুর বিরুদ্ধে দলীয় নেতৃবৃন্দের ক্ষোভ প্রকাশ। শৃঙ্খলা ভঙ্গ, কমিটি বাণিজ্য। স্কুল নিয়োগ বাণিজ্য, প্রভাব বিস্তার, ও সরকারি পুকুর লিজ নেওয়াসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, আদমদীঘি, নসরতপুর এলাকার মূর্তিমান আতঙ্কের নাম রাজু খান। তার নানা অপকর্মে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি ফ্রিডম পার্টি, জাসদ বিএম শাজাহান সিরাজ গ্রুপ এবং জাতীয় পার্টি করার পর আওয়ামী লীগে যুক্ত হয়েই দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক অবস্থান নিয়েছেন।
আরও পড়ুন…ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, যুবলীগ নেতাসহ গ্রেফতার-৩
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে মেজর জেনারেল গোলাম মাওলা নৌকা মার্কা নিয়ে অংশগ্রহণ করলে তার বিপরীতে রাজু খান স্বতন্ত্র প্রার্থী আনছার আলীকে দাঁড় করিয়ে দেন এবং নৌকাকে ফেল করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
এর আগে ১৯৯৬ সালে সোলাইমান মাস্টারের নৌকা মার্কার বিপক্ষে জাসদ নেতা এবিএম শাজাহান এর লাঙ্গল মার্কায় ভোট করেন রাজু খান।সে সময় তিনি আদমদিঘী উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
গেল ইউপি নির্বাচনে চাঁপাপুর, কুন্ডুগ্রাম ও নসরতপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজু খান তার নিকটাত্মীয়দের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেন। এতকিছুর পরেও আওয়ামী লীগে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছিল। কিন্তু রাজু খানের স্বৈরাচারী কর্মকান্ড হতাশ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে।
আরও পড়ুন…ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, যুবলীগ নেতা আটক
সান্তাহার ইউপি’র নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান জানান, রাজু খান আওয়ামী লীগে যুক্ত হয়ে কয়েক বছরই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তিনি কখনোই আওয়ামী লীগকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসেননি। এই চেয়ারম্যান ইবাংলা প্রতিবেদককে বলেন, কেন্দ্র থেকে ব্যবস্থা না নিলে আদমদিঘী উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী আর সক্রিয় হবেন না।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও এ প্রতিবেদককে বলেন, আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজু খানই যথেষ্ট।
স্থানীয় আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন বা নিষ্ক্রিয় করার জন্য ভিন্ন দল বা ভিন্ন মতাবলম্বীর প্রয়োজন নেই।
সান্তাহার সদর ইউপি চেয়ারম্যান আরো জানান, সরকারের উন্নয়ন এবং আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য জনগণের কাছে যেতে হয় কিন্তু আমি কোন প্রোগ্রামে জনগণের কাছে সরকারের উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়ার জন্য গেলেই রাজু খানের বিভিন্ন হুমকী ধামকী ও বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। আমরা জনপ্রতিনিধি হয়েও জনগণের কাছে আমাদের সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম তুলে ধরতে পারছি না ।
আরও পড়ুন…নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত র্যাব
সরে জমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজু খানের পরিবারের লোকেরা সবাই বিএনপি করলেও তিনি নিজ স্বার্থ হাসিল করার জন্যই আওয়ামী লীগে যুক্ত হয়েছেন।
সরকারি পুকুর টেন্ডারবাজি, স্কুলের নিয়োগ বাণিজ্যসহ ও পকেট কমিটি করে অঢেল সম্পদের মালিক বলে গেছেন। অত্র এলাকায় যারা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ করেছেন তাদেরকে নিস্ক্রীয় করে রাখা হয়েছে।
প্রয়াত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইফাদের পরিবার ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানা যায়, ২০২১ সালে ছাত্রলীগ নেতা ইফাদ রাজু খানকে থানা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ পাওয়ার জন্য ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিলেও তাকে সভাপতির পদ দিতে ব্যর্থ হন।রবর্তীতে পদ ও টাকা না পেয়ে আত্মহত্যা করে ইফাদ। সেই ঘুষের টাকা আজও তার পরিবারকে ফেরত দেয় হয়নি। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাককেও মদের মধ্যে বিষ প্রয়োগ করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে রাজু খানের বিরুদ্ধে।
রাজু খানের বেশ কয়েকজন ক্যাডারের মধ্যে যুবলীগ নেতা শাহীন ও তৌহিদ বর্তমানে খুনের মামলায় কারাগারে থাকলেও নেপথ্যের নায়ক রাজু খান মহা দাপটেই রয়েছে। থেমে নেই তার একচ্ছত্র আধিপত্য। তিনি আদমদিঘী উপজেলায় আওয়ামীলীগ, যুবলীগসহ দলের সকল অঙ্গ সংগঠনকে একেবারেই কোণঠাসা করে রেখেছেন।
সাবেক ফ্রিডম পার্টির এই নেতা বর্তমানে আওয়ামী লীগে আধিপত্য বিস্তার করছে। তার কৌশলের কাছে টুশব্দ করবার মত এলাকায় কোন লোক নাই। স্থানীয়দের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, রাজু খানের মতো নেতা আওয়ামী লীগে থাকলে আদমদীঘি উপজেলায় নেতাকর্মী খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তারা আরো বলেন, উপজেলায় স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় যত নিয়োগ হয় সব নিয়োগ রাজু খানের ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। উপজেলার প্রশাসন পর্যন্ত রাজু খানের নির্দেশ অমান্য করলে তাদের ওপর নেমে আসে এক ভয়াবহ কালো রাত্রি।
আরও পড়ুন…পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের পদযাত্রা
অনুসন্ধান বলছে, আদমদীঘি উপজেলায় ৫১৬টি দিঘী রয়েছে।এই দিঘীগুলোর মধ্যে বড় বড় বেশ কয়েকটি দিঘী তিন বছরের লিজ দেয়া হয়। রাজু খান কৌশলে আট লাখ, দশ লাখ টাকার লিজ, মাত্র এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বাগিয়ে নেয়। রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। উড়ে এসে জুড়ে বসা বিনা ভোটের উপজেলা চেয়ারম্যান রাজু খান বাংলা ভাইকেও হার মানিয়েছে।
উল্লেখিত বিষয়ে আদমদিঘী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম খান রাজুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে এ বিষয়ের সত্যতা জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
আরও পড়ুন…কমিশন পেতে ফ্রান্স থেকে এয়ারবাস কিনবে সরকার: ফখরুল
এরপর মুঠোফোন একাধিকবার ফোন দেওয়ার পরেও আর রিসিভ করেননি। অবশেষে হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন পাঠালে সিন করেও কোন উত্তর দেয়নি।