নানামুখী দ্বিধা-সংশয় নিয়েই অবশেষে নির্বাচনের পথে হাঁটছে বর্তমান সংসদের সাংবিধানিক প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা)। আজ সোমবার থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার এ কার্যক্রম শেষ হবে। এই দুই দিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রাজধানীর বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এই কার্যক্রম চলবে বলে গতকাল রবিবার দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
জাপার দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা-না করার প্রশ্নে দলে মতভিন্নতা কিংবা বহুমত থাকলেও নানা সমীকরণে ও কারণে দলটি এদিক-ওদিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে এখন নির্বাচনমুখী। ভেতরে ভেতরে কিছু ঘটনাপ্রবাহে এতদিনের অবস্থান থেকে নড়ে দলটি এখন নির্বাচনমুখী।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য বলছে, তারপরও দেশের ভেতরের বাইরের পরিস্থিতি বুঝে প্রকাশ্যে সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করবে জাপা। ভিন্ন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে, পরিস্থিতির আলোকে জাপাও নতুনভাবে চিন্তা করবে।
অন্যদিকে আগের তিনটি নির্বাচনের মতো এবারও জাপা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে গেলে, সে ক্ষেত্রে সমীকরণ বা ফয়সালা কী হবে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করতে দুই-এক দিনের মধ্যে গণভবনে যেতে পারেন জাপার শীর্ষ কয়েক নেতা। জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে বৈঠকটি হতে পারে।
জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী যেহেতু ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন, সেজন্য কোনো ঝুঁকি না নিয়ে আপাতত নির্বাচনি কার্যক্রম আমরা গুছিয়ে রাখছি। এর অর্থ এই নয় যে, আমরা নিশ্চিতভাবেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি কিংবা নেব না। খুব শিগগিরই আমরা দলীয় সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেব।
জানা গেছে, জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে ঘিরে দলে গড়ে ওঠা দুটি পৃথক বলয়ের বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি। জাপা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত নির্বাচন করবে বলে শনিবার রওশনের পক্ষ থেকে যে চিঠি গেছে ইসিতে- সেটা দলে নতুন করে সংশয় সৃষ্টি করেছে। এছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে গতকাল রওশন এরশাদের সাক্ষাতের ঘটনাও অস্বস্তি তৈরি করেছে দলের অভ্যন্তরে।
দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও নির্বাচন নিয়ে গত ৪ নভেম্বর জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর গুলশানের বাসায় বৈঠক করেছেন দলটির সিনিয়র- কো-চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যানরা। বৈঠকে নির্বাচনে দলের অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। ওই বৈঠকের বিষয়ে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘বৈঠকে একটি বিষয়ে আমরা সবাই একমত হয়েছি যে- যদি শেষ পর্যন্ত আমরা নির্বাচনে যাই, সেক্ষেত্রে জিএম কাদেরের একক নেতৃত্বেই সবকিছু হতে হবে। যদি রওশন এরশাদকে নিয়ে পৃথক গ্রুপিংয়ের চেষ্টা করা হয়, তাহলে আমরা ভিন্ন সিদ্ধান্তও নিতে পারি।’
জাপা নির্বাচমুখী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় দলটির গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান, বিএনপি নির্বাচনে আসুক আর না আসুক, গত তিনটি নির্বাচনের মতো এবারও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন-সমঝোতার ভিত্তিতে জাপার নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা চলছে।
এসব কথাবার্তায় ঘুরেফিরে আসন সংখ্যার বিষয়টিই সামনে আসছে। এ বিষয়েও অনানুষ্ঠানিক কথা হচ্ছে, ২৫ থেকে ৩৭ আসন সংখ্যা নিয়েও আলোচনা চলছে। এই নেতারা জানান, যদি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন হয়, তাহলে তাতে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিক বিকল্প জাপার কাছে এখন পর্যন্ত নেই। এছাড়া নির্বাচনে না গিয়ে দলের ভেতরের বাইরের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো সাংগঠনিক শক্তির প্রশ্নটিও রয়েছে। যার কারণে, বাস্তবতা বিবেচনায় জাপা নির্বাচনমুখী হওয়া ছাড়া আপাতত বিকল্প দেখছে না। তারপরও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জাপা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।