বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের কপ–২৮ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশন। সমাপনীতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে কীভাবে কী পরিমাণে নতুন তহবিল বণ্টন করা হবে এই কাঠামোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। একইসঙ্গে উন্নত দেশগুলোকে কী পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে, এসব আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ারও কথা রয়েছে।
কপ–২৮ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তহবিল আদায়ে নিয়েছে শক্ত অবস্থান। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, তাপপ্রবাহসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে গেছে। এসব দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন>> কপ-২৮: জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে শেষ মুহূর্তেও প্রচেষ্টা
দুটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের মধ্য দিয়ে এই সম্মেলন শেষ হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি তহবিল ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’ (জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি তহবিল) গঠনের পরই সেখানে ৭০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন (জিএসটি) প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়েছে গত সোমবার।
কপ-২৮ সম্মেলনে অংশ নেওয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদল জানিয়েছে, শিল্পোন্নত দেশগুলো যাতে জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি তহবিলে অন্য কোনো খাত থেকে অর্থ এনে না দেয় এই আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ জিসিএফ ও অভিযোজন তহবিলে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে নতুন তহবিলে বরাদ্দ না দেয়, সে ব্যপারে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করা হয়েছে।
প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, বিশ্বের তাপমাত্রা এই শতাব্দীর মধ্যে যাতে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ে, সেই লক্ষ্যে শিল্পোন্নত দেশগুলোতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ যাতে এসব তহবিল থেকে দ্রুত বরাদ্দ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সুষ্ঠু বণ্টন করতে পারে এই আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলনে পরবর্তী আয়োজক দেশ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে এশিয়া মহাদেশের আজারবাইজান। গত সোমবার পরবর্তী জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯ এর স্বাগতিক দেশ আজারবাইজান এর নাম ঘোষণা করা হয়। জানা যায়, আজারবাইজানে দীর্ঘ এক মাস অচলাবস্থার পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জলবায়ু সম্মেলনের পরবর্তী আয়োজক হতে পশ্চিম ইউরোপের সমর্থন পেয়েছে দেশটি। পার্শ্ববর্তী দেশ আর্মেনিয়া এই আয়োজনে ভেটো দেবে না বলেও মত প্রকাশ করেছে।
আজারবাইজান প্রতিদিন প্রায় অর্ধ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। এছাড়া দেশটি জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন (ওপেক) এর সদস্য রাষ্ট্র। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত আজারবাইজানের রাষ্ট্রদূত ইলিন সুলেমানভ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, জলবায়ু সম্মেলনে আয়োজনের সক্ষমতা রয়েছে দেশটির।
কপ-২৮ সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের প্রায় ৭০ হাজার প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে সরকারি প্রতিনিধিদলের ৩৭ জন এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রায় ৪০ সদস্য এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
ইবাংলা/এসআরএস