মৃত্যু যে কত করুণ হতে পারে, তার আরেকটি নজির হয়ে রইল বেনাপোল এক্সপ্রেস। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে যখন ট্রেনটিতে আগুন জ্বলছিল, তখন এক যাত্রী বাইরে বের হওয়ার উপায় খুঁজতে গিয়ে জানালা দিয়ে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু তার আর বের হওয়া হয়নি। ওই অবস্থাতেই সবার চোখের সামনে আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হলেন তিনি।
শুক্রবার রাতে কমলাপুর পৌঁছানোর সামান্য আগে গোপীবাগে আগুন লাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসে। মুহূর্তের মধ্যে কয়েকটি বগিতে আগুন ধরে যায়। হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে অনেকেই আহত হয়েছেন, দগ্ধ হয়েছেন। মারা গেছেন দুই শিশুসহ চারজন। এর মধ্যে একযাত্রীর মৃত্যু ছিল খুবই মর্মান্তিক।
ট্রেনে আগুন লাগার পর তিনি দরজা দিয়ে বের হতে না পেরে জানালা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বিপজ্জনক হলেও প্রাণ বাঁচাতে সে চেষ্টাই করতে গিয়েছিলেন তিনি। জানালার বাইরে হাত বের করে দিয়েছিলেন সাহায্যের জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার আর বের হওয়া হয়নি। শরীরের অর্ধেক ট্রেনের জানালার বাইরে, অর্ধেকটা ভেতরে- এমন অবস্থাতেই শত শত মানুষের চোখের সামনে আগুনে পুড়ে মারা যান ওই যাত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জানালা দিয়ে ওই ব্যক্তিকে দেখে অনেকেই তাকে বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতে সফলতা আসেনি। এক ব্যক্তি ওই যাত্রীকে উদ্ধার করার জন্য তার শরীর স্পর্শ করলে গরমে তার হাতও পুড়ে যায়। অনেকে বাঁশ দিয়েও তাকে বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবার সামনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে তার। ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ইকবাল হোসেন জানান, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি জানান, প্রথমে ট্রেনটির ‘চ’ বগির একটি সিটে আগুন লাগে। তখন যাত্রীরাই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে যাত্রীরা নিচে নেমে আসেন। তবে পুড়ে যাওয়া বগিগুলো এসি বগি হওয়ায় যাত্রীরা বের হতে সমস্যায় পড়েন।
এদিকে আজ ও আগামীকাল (৬ ও ৭ জানুয়ারি) বেনাপোল এক্সপ্রেসসহ ২২ ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম মহাব্যবস্থাপকের ফেসবুক পোস্টে এই তথ্য জানানো হয়। তবে ট্রেনগুলো বন্ধের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ সেখানে জানানো হয়নি।