দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন দিনের মাথায় টানা চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দলের প্রধান হিসেবে পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শেখ হসিনা।
সংসদের নবনির্বাচিত সদস্যরা বুধবার সকালে জাতীয় সংসদভবনে শপথ নেবেন। তারপর বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে হবে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় নতুন মন্ত্রিসভার শপথ হবে।”
বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার শপথ আয়োজন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, “আমাদের তো প্রস্তুতি আছেই। তালিকা পেলেই আমরা কার্যক্রম নেব। যারা মন্ত্রী হবেন, তাদের সঙ্গে সরাসরি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মহোদয় কথা বলবেন। দাওয়াত দেবেন, তারপর যেতে হবে বঙ্গভবনে।”
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন মঙ্গলবার বিকালে নিজের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশনা পেলেও কারা শপথ নেবেন, সেই তালিকা তিনি পাননি।
“আপনারা জানেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন হওয়ার পরে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ সদস্যগণ শপথ নেবেন। সেই প্রেক্ষিতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকালে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। ঐতিহ্যগতভাবেই শপথ অনুষ্ঠান বঙ্গভবনে হয়ে থাকে। আমরা সন্ধ্যা ৭টায় শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
এবার কারা মন্ত্রী হচ্ছেন এবং কত সদস্যের মন্ত্রিসভা হচ্ছে জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, “এই কাজটা আমরা এখনও শুরু করিনি। শপথ অনুষ্ঠানের জন্য গাড়ি রেডি আছে, আমরা তেরো, চৌদ্দশর মত (অতিথিকে) দাওয়াত দেব।”
সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে রোববার ভোট হয়েছে ২৯৯ আসনে। এরমধ্যে একটি কেন্দ্রে ফল স্থগিত থাকায় ময়মনসিংহের একটি আসনের ফলাফল আটকে আছে।
২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২২, জাতীয় পার্টি ১১, ওয়ার্কার্স পার্টি ১, জাসদ ১, কল্যাণ পার্টি ১ এবং ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তাদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
গেজেট প্রকাশের পর তা সংসদ সচিবালয়ে পাঠাবে ইসি সচিবালয়। বুধবার সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে নতুন সংসদের এমপিদের শপথ অনুষ্ঠান হবে।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রথমে নিজে দ্বাদশ সংসদের এমপি হিসেবে শপথ নেবেন। পরে তিনি অন্যদের শপথ বাক্য পাঠ করাবেন।
একাদশ সংসদের প্রধান হুইপ ও আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সেক্রেটারি নূর ই আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, বুধবার সকাল ১০টায় শপথ অনুষ্ঠানের পর বেলা ১২টায় প্রথম বৈঠকে বসবে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল।
এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন। এরপর বঙ্গভবনে হবে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ।
একাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর, এরপর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হয়। ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি শপথ নেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। সেদিনই রাষ্ট্রপতির সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান।
৭ জানুয়ারি বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রীকে শপথ পড়ান তখনকার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
তার আগের দিনই সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেওয়া হয় মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন, কাকে কোন দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। শপথের আগে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা সেবারই প্রথম।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের তালিকা পাবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সে অনুযায়ী নতুন মন্ত্রীদের শপথের জন্য আলাদা আলাদা ফোল্ডার প্রস্তুত করতে হবে।
মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীদের চালকসহ সার্বক্ষণিক গাড়ির সুবিধা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপ-মন্ত্রী গত পাঁচ বছর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাদের মধ্যে টেকনোক্র্যাট দুই মন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রী নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ করেন।