উদ্বোধনের পর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রাজধানীবাসীর প্রিয় পরিবহনে পরিণত হয়েছে মেট্রোরেল। রাজধানীর চিরাচরিত যানজট এড়িয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করা যায় বলে বাসের তুলনায় বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও মেট্রোরেলে যাত্রা করতে পছন্দ করেন বেশির ভাগ মানুষ।
সহজ যাতায়াতের জন্য মেট্রোরেলের সূচি বর্ধিত করারও দাবি অনেকের। একটি পক্ষ আবার ভাড়া আরও কিছুটা কমানোর প্রত্যাশা করে। এরই মধ্যে মেট্রোরেল যাত্রীদের জন্য হতাশাজনক একটি খবর, ভাড়া আরও বাড়তে পারে।
কারণ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে মেট্রোরেলের বিদ্যমান ভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বসাতে চাইছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মেট্রোর ভাড়ার ওপর এই ভ্যাট আরোপ।
নিয়ে একাধিক বৈঠক বসে এনবিআর ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে। এনবিআর ও মেট্রোরেল কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে সবশেষ বৈঠকটি হয় গত ফেব্রুয়ারি মাসে। সেখানে অবশ্য এনবিআরের প্রস্তাব নাকচ করে দেয় মেট্রো কর্তৃপক্ষ। পরে মেট্রো কর্তৃপক্ষ টিকিটের ওপর ভ্যাট না বসানোর যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠিও দেয়।
বৈঠকে ভ্যাট আরোপের পক্ষে এনবিআর যুক্তি দেখায় যে আইন অনুযায়ী, যে কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের বিধান আছে। আর মেট্রোরেল যেহেতু পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি গণপরিবহন, তাই মেট্রোর ভাড়াতেও ভ্যাট আরোপ হওয়া উচিত।
কিন্তু এর বিপরীতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) যুক্তি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের আইন থাকলেও ওইসব ট্রেনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শ্রেণি ছাড়াও সাধারণ শ্রেণি আছে।
যাত্রীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী শ্রেণি নির্বাচন করে ন্যায্যমূল্যে টিকিট কেনার সুযোগ পেয়ে থাকেন। কিন্তু মেট্রোরেলের পুরোটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সেখানে সব যাত্রীর একই টিকিট কাটতে হয়। এ ছাড়া মেট্রোরেল এখন পুরোপুরি গণপরিবহন, যেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ভ্রমণ করেন।
ভাড়ার ওপর ভ্যাট বসাতে ডিএমটিসিএলের অনীহায় নিজেদের অবস্থান থেকে সবশেষ পিছিয়ে আসে এনবিআর। তবে জানা গেছে, মেট্রোরেলের ভাড়ার ওপর ভ্যাট বসানো নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। ঈদের পর আবারও আলোচনায় বসবে দুপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত মেট্রোরেলের ভাড়ার ওপর ভ্যাট মওকুফ আছে। কিন্তু এ সুবিধা আর অব্যাহত রাখতে আগ্রহী নয় এনবিআর। ২০২৪-২৫ অর্থবছরেই এ সুবিধা তুলে দিতে চায় সংস্থাটি।
সূত্র বলছে, নতুন অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) বাজেট ঘোষণার পর অর্থাৎ আগামী জুলাই মাস থেকে মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আরোপ করা হতে পারে।
ডিএমটিসিএলের ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে রাজধানীর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেলের ভাড়া ১০০ টাকা। আর যেকোনো দূরত্বে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা।
এ ভাড়ার সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করলে সর্বনিম্ন ভাড়া বেড়ে দাঁড়াবে ২৩টাকা। আর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া হবে ১২০ টাকা। ২০২৫ সালের মধ্যে মেট্রোরেলের কমলাপুর স্টেশন চালু হবে বলে আশা করছে ডিএমটিসিএল।