টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন ভারত।
এর আগে ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল ভারত। দীর্ঘদিন পর ফের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি জিতল ভারত।
আরও পড়ুন…দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ১৭৭ রান বিশ্বকাপ জয়ের জন্য
শনিবার (৩০ জুন) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের ফাইনাল ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান করে ভারত। দলকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর উপহার দিতে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন সাবেক অধিনায় বিরাট কোহলি। ফাইনালের আগে ৭ ম্যাচে ৭৫ রান করা বিরাট, ট্রফি নিশ্চিত করার ম্যাচে করেছেন ৫৯ বলে ৭৬ রান।
টার্গেট তাড়া করতে নেমে মাত্র ১২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তৃতীয় উইকেটেট্রিস্তান স্টাবসের সঙ্গে ৩৮ বলে ৫৮ রানের জুটি গড়েন ওপেনার কুইন্টন ডি কক।২১ বলে ৩১ রান করে ফেরেন ট্রিস্তান স্টাবস। এরপর হেনরিক্লেসেনের সঙ্গে ২৩ বলে ৩৬ রান করেই আউট হন ডি কক। তিনি ৩১ বলে ৩৯ রান করে ফেরেন।
পঞ্চম উইকেটে ডেভিড মিলারকে সঙ্গে নিয়ে মাত্র ২২ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়েন হেনরি ক্লেসেন। ৩৬ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ৪৫ রান।
১৫তম ওভারে অক্ষর প্যাটেলের করা ওভারে দুই চার আর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ২৪ রান আদায় করে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন হেনরি ক্লেসেন।
জয়ের জন্য শেষ ৩০ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৩০ রান। এরপর ১৮ বলে মাত্র ১০ রানে হেনরি ক্লেসেন ও মার্কো জেনসেনের উইকেট হারিয়ে কঠিন চাপের মধ্যে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জয়ের জন্য শেষ ১২ বলে প্রয়োজন ছিল ২০ রান। আর্শদীপ সিং ১৯তম ওভারে দেন মাত্র ৪ রান। জয়ের জন্য শেষ ৬ বলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে করতে হতো ১৬ রান। উইকেটে ছিলেন ডেভিড মিলার ও কেশভ মহারাজ।
আরও পড়ুন…দেশে ফিরল টাইগাররা বিশ্বকাপ হেরে
শেষ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ঠিক বাউন্ডারিতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ডেভিড মিলার। ব্যাটিংয়ে নেমেই বাউন্ডারি হাঁকান কাগিসো রাবাদা।
জয়ের জন্য ৪ বলে প্রয়োজন ছিল ১২ রান। হাতে ছিল ৩ উইকেট। তৃতীয় বলে সিঙ্গেল রান নেন রাবাদা। জয়ের জন্য ৩ বলে প্রয়োজন ছিল ১১ রান।চতুর্থ বলে এক রানের বেশি করতে পারেননি মহারাজ। পরের ডেলিভারি হোয়াইট দেন হার্দিক পান্ডিয়া।
২ বলে প্রয়োজন ছিল ১০ রান। পঞ্চম বলে ক্যাচ তুুলে দেন রাবাদা। শেষ বলে এক রানের বেশি করতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৭ রানের জয় পায় ভারত।
এদিন ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে বিশ্বকাপের ফাইনালে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। ইনিংসের প্রথম ওভারে মার্কো জেনসেনের করা ওভারে ৩টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৫ রান আদায় করে নেন চলতি বিশ্বকাপে অফ ফর্মে থাকা বিরাট কোহলি।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে কেশভ মহারাজের করা ওভারের প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকান ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তৃতীয় বলে ডট। চতুর্থ বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন রোহিত।
এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্থ। তার বিদায়ে মাত্র ৩ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় ভারত।
রোহিত শর্মা ও ঋষভ পন্থের উইকেট হারিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয়ে পড়ে যাওয়া দলকে খেলায় ফেরানোর আগেই ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তারকা ব্যাটসম্যান সূর্যকুমার যাদব। তার বিদায়ে মাত্র ৩৪ রানেই ৩ উইকেট হারায় ভারত।
এরপর চতুর্থ উইকেটে অক্ষর প্যাটেলকে সঙ্গে নিয়ে ৫৪ বলে ৭২ রানের জুটি গড়েন বিরাট কোহলি। ৩১ বলে এক চার আর ৪টি ছক্কার সাহায্যে ৪৭ রান করে ফিরেন অক্ষর প্যাটেল।
এরপর শিবম দুবেকে সঙ্গে নিয়ে ৩৩ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন বিরাট কোহলি। খেলা শেষ হতে বাকি ছিল মাত্র ৭ বল। তার আগে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন বিরাট। তার আগে ৫৯ বলে ৬টি চার আর দুটি ছক্কার সাহায্যে দলীয় সর্বোচ্চ ৭৬ রান করে ফেরেন কোহলি।
অথচ ফাইনালের আগে বিরাট কোহলি ছিলেন চরম ব্যর্থ। যে কারণে তাকে নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। অনেকে বাদ দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলেন।
কিন্তু অধিনায়ক রোহিত শর্মার বিশ্বাস ছিল ফাইনালে জ্বলে উঠবেন কোহলি। অবশেষে তাই হলো। ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে স্বমহিমায় জ্বলে উঠলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
শেষ ৮ বলে ভারত হারায় ৩ উইকেট। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলটি শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান করে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন কোহলি।
৪৭ রান করেন অক্ষর প্যাটেল। ১৬ বলে ২৭ রান করেন শিবম দুবে। বাকিরা কেউ দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি।দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ২টি করে উইকেট নেন কেশভ মহারাজ ও আনরিচ নর্টজে। একটি করে উইকেট নেন কাগিসো রাবাদা ও মার্কো জেনসেন।