তিন কারণ শনাক্ত পোশাক কারখানায় অস্থিরতার পেছনে

টানা কয়েকদিন গাজীপুর ও আশুলিয়ায় বিভিন্ন দাবি আদায়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভে বিপর্যস্ত তৈরি পোশাক শিল্প।প্রথমদিকে শ্রমিকদের দাবিকে পাত্তা না দিয়ে উসকানিদাতা, বহিরাগত হামলাকারী ও ঝুট ব্যবসায়ীদের দায়ী করে মালিকপক্ষ। এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শ্রমিকদের দাবি আংশিকভাবে মেনে নেওয়া হয়। ততদিনে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নুরুল কাদির অডিটোরিয়ামে আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর চলমান সংকট ও উত্তরণের পথ নিয়ে মতবিনিময় সভা হয়।

সভায় শ্রমিক অসন্তোষের জন্য ৩টি কারণ দায়ী বলে উল্লেখ করেন সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান। এগুলো হলো- বহিরাগতদের আক্রমণ-ভাঙচুর, শ্রমিকদের যৌক্তিক ও অযৌক্তিক দাবির সমন্বয়ে অস্থিরতা ও ঝুট ব্যবসার আধিপত্য।

মো. মঈন খান বলেন, ‘শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিক, তবে সমাধান না হলে শিল্পের অস্থিরতা নিরসন সম্ভব নয়। পোশাক শিল্পকে রক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবে সেনাবাহিনী।’

এদিকে, শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতেই একটি চক্র শিল্প কারখানায় অস্থিরতা তৈরি করছে। এখন বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে উপদেষ্টাদের বিশেষভাবে নজর দেওয়া জরুরি।

উদ্দেশ্যমূলকভাবে কারখানা বন্ধ রাখা মালিকদের মনে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের আহ্বান জানাচ্ছি আগামীকাল তারা কারখানাতে ফিরবেন। আর যে সমস্ত কারখানার মালিকপক্ষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে কারখানা বন্ধ রাখবেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন, তাদেরকেও মনে রাখা হবে।’

সভায় হামিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে কারখানায় ভাঙচুর না হলে, অগ্নিসংযোগ হবে না এমন নিশ্চয়তা পেলে কারখানা চালাবো; না হলে আর চালাবো না। বাংলাদেশ থেকে ক্রয়াদেশ সরে যাচ্ছে। অনেক কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন মালিকরা। এই মাসে কোনোভাবে বেতন দিতে পেরেছি। কিন্তু সামনের মাসে ৭৫ হাজার শ্রমিকের বেতন দিতে পারব কি না তা জানি না।’

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘শ্রমিকরা আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। আমরা আপনাদের কথা শুনবো। আপনাদের সমস্যার সমাধান করব। ’

মালিকদের উদ্দেশে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে দিন। এটা বড় সমস্যা। শ্রমিকদের নাম করে বহিরাগত যারা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

আরো পড়ুন ঃসশস্ত্র বাহিনীর ২৩০ কর্মকর্তা চাকরি ফেরত চেয়ে আবেদন করেছেন

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াসহ পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা ও শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।