পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের মাঝে সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলোতে দেশের বাইরের শক্তি ও পতিত স্বৈরাচারি সরকারের ইন্ধন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তবর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্ঠা এ এফ হাসান আরিফ।
অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলার অবনতি যারা করবে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবেনা এবং ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা অবনতির চেষ্ঠাকারিদের হাত ভেঙ্গে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ঠা লে: জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম। রাঙামাটি সেনা রিজিয়নে রাঙামাটির স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আঞ্চলিক দলের নেতাগণসহ নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্বর্তন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন উপদেষ্ঠাদ্বয়।
আরও পড়ুন…রাঙামাটিতে অনির্দিষ্ট্যকালের জন্য যাত্রী ও পন্যবাহী যান চলাচল বন্ধ
এসময় তারা বলেন, বৈঠকে সবাই বলেছেন আমরা সম্প্রীতি চাই। কিন্তু জানি না কোথায় ছন্দপতন হচ্ছে। ছন্দপতনের বিষয়ে সবাই একটি বাক্য উচ্চারণ করেছে; সেটি হলো ষড়যন্ত্র। বাইরে থেকে একটি ষড়যন্ত্র হচ্ছে আমাদের এই সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ঠা বলেন, পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলোর সংগঠিত করার পেছনে কারা জড়িত সেটা বের করতে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। আইন শৃঙ্খলার কোনো অবস্থায় অবনতি করা যাবেনা মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ঠা বলেন, আমরা কোনো অবস্থায় সন্ত্রাসীদের ছাড় দিবোনা। পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে গণমাধ্যকর্মীদের প্রতি আহবানও জানিয়েছেন তিনি।
এরআগে বেলা সোয়া ১২টার সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ঠার নেতৃত্বে স্থানীয় সরকার উপদেষ্ঠা, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্ঠা, পুলিশের আইজিপি, দুইটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান, সেনাবাহিনীর চট্টগ্রামের জিওসিসহ নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্বর্তন কর্মকর্তাগণ রাঙামাটি সেনা রিজিয়নের প্রার্ন্তিক মিলনায়তনে উপস্থিত হন।
এরপর বেলা সাড়ে ১২ টার সময় সেখানে রাঙামাটির বিভিন্ন সরকারী অফিসের প্রধানগণ, বিএনপি-জামায়াত ও জেএসএসর নেতৃবৃন্দ, চাকমা সার্কেল চীফসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিগণ, রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দের রাঙামাটিতে শুক্রবার সংগঠিত সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের পরবর্তীতে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন।
আরও পড়ুন…পার্বত্য জেলায় শান্তি নিশ্চিতকরণে সরকার বদ্ধপরিকর
প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী চলা এই মতবিনিময় সভায় জেএসএস এর পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবেই জানানো হয়েছে শুক্রবার রাঙামাটিতে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক্ ঘটনাটির সাথে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস কোনো সম্পর্ক ছিলোনা। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মতবিনিময় সভায় জানান, পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারি সরকারের রেখে যাওয়া অপশক্তি এবং পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ রাঙামাটিতে শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তান্ডব চালিয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের সূত্রপাত ঘটায়।
এদিকে, শুক্রবারের ঘটনার পর পার্বত্য রাঙামাটিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জারি করা ১৪৪ ধারা অব্যাহত রয়েছে। মানুষজন জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এলাকাগুলোতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের ডাকে রাঙামাটিতে সব ধরনের পণ্য ও যাত্রীবাহি যানবাহন চলাচল সম্পূর্ন বন্ধ রাখা হয়েছে।
অপরদিকে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ এর ডাকে তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘন্টার সড়ক ও নৌ পথ অবরোধ কর্মসূচী চলছে। শনিবার সকাল থেকে রাঙামাটি শহরে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আর্মড পুলিশসহ র্যাবের ব্যাপক উপস্থিতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো লক্ষণীয়।
ইবাংলা/ বা আইএইচ