ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবির মুখে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় নিজ কার্যালয়ে এই ঘোষণা দেন তিনি। এ সময় পদত্যাগপত্রেও স্বাক্ষর করেন পরিচালক সাইফুল ইসলাম। পরে কড়া নিরাপত্তায় হাসপাতাল ত্যাগ করেন তিনি।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বরিশালের সন্তান, তাই বরিশালের প্রতি, এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার আবেগ, ভালোবাসা আছে। তবে পরিচালক পদে এখন থেকে আমি আর থাকছি না।’
পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করার সময় বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনসহ সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও আনসারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
চার দফা দাবিতে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল শনিবার দুপুর থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন হাসপাতালে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। এতে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক ও নার্সদের লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা এ কর্মসূচি শুরু করেন। তাঁদের দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়ে মধ্যম সারির চিকিৎসকেরাও কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। এ নিয়ে শনিবার সকালে আলোচনার জন্য ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ওই বৈঠকে হাসপাতালের পরিচালক ছাড়াও সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মহানগর পুলিশের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি অংশ নেন।
বৈঠকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা চার দফা দাবি তুলে ধরে বাস্তবায়নের দাবি জানান। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বাস্তবায়নের কথা জানান। কিন্তু ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা পরিচালকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন কিংবা এ-সংক্রান্ত লিখিত চান। লিখিত না দেওয়ায় ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি শুরু করেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে মো. জুনায়েদ (৮) নামের এক শিশু মারা যায়। শিশুটি নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হলে শিশুটির মা সাথী আক্তার চিকিৎসক ও নার্সদের গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম বাদী হয়ে ওই দিন রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদেই শনিবার ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি শুরু করেন।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের চার দফা দাবি হলো—অপরাধীদের গ্রেপ্তার, হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় আনসার সদস্যদের সংখ্যা তিন গুণ বৃদ্ধি ও কমপক্ষে ৩০ জন পুলিশ সদস্য রাখা; শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি বন্ধ করা এবং একজন রোগীর সঙ্গে একজন স্বজন রাখা ও চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা। এই দাবি পূরণের জন্য তাঁরা ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। অন্যথায় আজ রোববার আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
পরিচালকের পদত্যাগের খবরে শিক্ষার্থী ও ইন্টার্নরা উল্লাস প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফিরেছেন। তবে তাঁদের দাবি, একজন যোগ্য ব্যক্তিকে হাসপাতালের পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হোক। পাশাপাশি তাঁদের চার দফা দাবি অতিসত্বর বাস্তবায়ন না হলে আবারও আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, ৫ আগস্টের আগে ৩ আগস্ট পরিচালক সাইফুল ইসলাম ও তাঁর অনুসারীরা স্বৈরাচারের পক্ষে সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এ ছাড়া পরিচালকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা তুলে ধরেন তাঁরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য আগেই তাঁর পদত্যাগ করা উচিত ছিল। কেননা তিনি হাসপাতালের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনিয়ম ও দুর্নীতি করে মেডিকেলের চিকিৎসাব্যবস্থা বাণিজ্যমুখী করেছেন।
হাসপাতালের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান শাহিন বলেন, ‘পরিচালকের পদ থেকে মৌখিক ও লিখিত পদত্যাগপত্র হাতে পেয়েছি। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’
ই-বাংলাঃ জে ডি সি