বগুড়া সোনাতলার পাকুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী শান্তর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম , মাদক ব্যবসাসহ জুয়ার আসর পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। জানাগেছে বিগত ইউপি নির্বাচনে শান্ত নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীর সাথে তার দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্রমতে জানা গেছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিপথগামী ছেলেদের নিয়েই তার কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এলাকার পদ্মপাড়া হুয়াকুয়া, নিশ্চিন্তপুর, আচারেরর পাড়া,পাকুল্লা, উত্তর করমজা, রাধাকান্তপুর ও সাতবেকী গ্রামের বেশ কয়েকজন শিক্ষক রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শান্তর নানা অপকর্মের কথা।
ভয়ে কেউ মুখ না খুললেও ই বাংলার কাছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে, তারা জানায় শান্তর কারণে অত্র এলাকায় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এর কারণ হিসেবে ব্যক্ত করেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী, ইয়াবা ব্যবসায়ী ও জুয়ারুদের নিয়ে শান্ত চেয়ারম্যানের চলাফেরা।
জানা গেছে, এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশা হলেও চেয়ারম্যানের নিষ্ক্রিয়তায় কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। তার নানা কুকর্মে স্থানীয়রা চেয়ারম্যানের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে পদ্মপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় বানিয়েছে। যদিও পাকুল্লায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় রয়েছে। সেখানে না বসে পদ্মপাড়া তার নিজ বাড়ির নিকটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ দখল করে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।
এ অস্থায়ী ইউপি পরিষদ কার্যালযয়ে রাতভর জুয়ার আসর ও মাদক সেবনের অভিযোগ রয়েছে। বগুড়া শহর থেকে এবং সোনাতলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটরসাইকেলযোগে জুয়াড়িরা স্কুল মাঠে উপস্থিত হয়ে রাতভর জুয়া খেলে।
সেই জুয়ার আসরে চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী শান্ত নিজেই অবস্থান করে। এসব কারণে সচেতন এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা ভয়ে মুখ না খুললেও এ প্রতিবেদককে এর কাছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শান্ত চেয়ারম্যানের মাদক-বাণিজ্য জুয়ার আসর বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছে।
তারা আরো বলেন, কাবিখা টিআর ও ভি জিএফ এর চাল গম আত্মসাৎ করছে। বিগত বছরে পাকুল্লা ইউনিয়নব্যাপী ভূমিহীন ও দরিদ্রদের মাঝে আরডিএ প্রকল্পের গরু ও ছাগল বিতরণ করেছেন শান্ত চেয়ারম্যান।
এখানেও হতদরিদ্র ও ভূমিহীন কৃষকদের কাছ থেকে গরুপ্রতি ১০ হাজার টাকা ছাগল প্রতি ৪ হাজার হাজার ঘুষ নেয়ার অভিযোগ শান্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। যারা প্রাপ্য নয় টাকা দিলে তাদেরকেই গরু-ছাগল দেয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।
শান্ত চেয়ারম্যানের দুর্নীতি এখানেই শেষ নয়, সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার স্বরূপ ভূমিহীন ও অসহায় দরিদ্রদের একটি করে বাড়ি উপহার দেয়ার যে প্রক্রিয়া সেখানেও শান্ত চেয়ারম্যানের ঘুষ বাণিজ্যের থাবা থেকে রেহাই পায়নি অসহায় দরিদ্র মানুষগুলো।
জানা গেছে সাতবাকির চর এলাকায় বালুচরের মধ্যে যে বাড়িগুলো নির্মাণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের রড সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে আগামী বন্যায় এই বাড়িগুলো টিকে না থাকার সম্ভাবনা বেশি। কারণ বাড়িগুলোতে এখনই ফাটল দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আগামী বন্যা মৌসুমে চার থেকে ছয় ফিট পানি ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবছরই নির্মাণকৃত বাড়ির জায়গায় পাঁচ থেকে ছয় ফিট পানি হয়। তারা জানান শান্ত চেয়ারম্যান প্রতিটি ঘর বরাদ্দে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন।
এসব বিষয় তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উল্লেখ্য যে শান্ত চেয়ারম্যানের অপকর্মের শেষ নেই, বগুড়া শহরে তার রয়েছে একটি হোটেল ব্যবসা সেখানেও অনৈতিক কর্মকাণ্ড হয়, তবে স্থানীয় সাংবাদিকদের তৎপরতায় অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
উল্লেখ্য যে, পাকুল্লা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের ত্যাগি নেতারা এ প্রতিবেদকের কাছে জানান, আগামি ইউপি নির্বাচনে দলের ত্যাগি সৎ ও শিক্ষাবন্ধব এবং কর্মী বান্ধব জনদরদী ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বোর্ডের কাছে আবেদন জানান।
পাকুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী শান্তর কাছে এ বিষয়ে সত্যতা জানতে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে একটি কুচক্রি মহল ষড়যন্ত্র করছে এবং তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চক্রান্তে লিপ্ত। চেয়ারম্যান আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে উপরোল্লেখিত সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
ই বাংলা/ আই/ ২০ জুন, ২০২১