দিনেদুপুরে জুয়ার মেলা, ঘোমটা দিয়ে খেলছেন বাড়ির বউরাও

জুয়ার মেলা! প্রকাশ্য দিবালোকে বছরে একদিন বসে এই মেলা। পুরুষ ,মহিলা, গৃহবধুরা নির্ভয়ে জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করেন। মালদা জেলার পুরাতন মালদার ৩নং ওয়ার্ডের মোকতিপুরের আমবাগান এলাকায় বসে এমন জুয়ার মেলা। বছরের একদিন ১০ ঘন্টা ধরে চলে এই ‘জুয়ার মেলা’।

প্রকাশ্যে এই জুয়ার আসরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় পুলিস প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এই ডিজিটাল যুগে সংসারে সুখের আশায় জুয়া খেলায় মেতে ওঠেন এই জেলার বাসিন্দারা। পড়শি জেলা ও রাজ্য থেকেও এই জুয়ার মেলাতে জুয়া খেলতে আসেন বহু বাসিন্দা।

পুরাতন মালদার মোকাতিপুর এলাকায় এসেছিলেন গৃহবধূ পূজা বিশ্বাস ,হেমলতা চক্রবর্তী, দীপিকা কর্মকার । তাঁরা বলেন, এই মেলায় এসে মুলাষষ্ঠী পূজা দিয়ে সামান্য পয়সার জুয়া খেলেছি। লাভও হয়েছে। মহিলারা আরো জানান, বছরের এই দিনে আমাদের জুয়া খেলায় কোন বাধা থাকে না। তাই এই দিনটির দিকে আমরা সারা বছর তাকিয়ে থাকি।

মেলায় এসেছিলেন পুরাতন মালদা পুরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বপ্ন হালদার। তিনি জানান বিয়ে হওয়া ১৬ বছর হল। বিয়ের পর থেকে এই মেলায় আসি। পরিবারের সন্তানের মঙ্গল কামনার জন্য বেহুলা নদীর জল খেয়ে শুদ্ধিকরণ করি। ষষ্ঠী পূজা দিয়ে এই মেলার অন্যতম মিষ্টি লেউড়ি সন্দেশ কিনি। প্রতিবছর জুয়াও খেলাতে অংশগ্রহণ করি। এই মেলার ঐতিহ্য হচ্ছে মহিলারাও জুয়া খেলে। আজকের দিনে কারো জন্য বাধা-বিপত্তি নেই। তাই সকলে মিলে আমরা প্রচুর আনন্দ উপভোগ করে থাকি।

মূলত মুলা ষষ্ঠীর দিনে এই জুয়ার মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দেবী লক্ষ্মীকে পূজা দিয়ে শুরু হয় এই জুয়ার মেলা। এই মেলার পাশেই সতী বেহুলা নদী বয়ে গিয়েছে। সেই বেহুলা নদীর জল খেয়ে শুদ্ধ হন মহিলারা।শুধু মালদা কিংবা রাজ্যের অন্যান্য জেলা থেকে নয়, বিহার, ঝাড়খণ্ড, এমনকি অসম থেকেও অনেকে এই জুয়ার মেলায় আসেন জুয়া খেলতে। শতাব্দী প্রাচীন জুয়া মেলা হিসাবে প্রচলিত এই মেলা। মেলাকে ঘিরে বহু কাহিনী প্রচলিত আছে।

এই জুয়া খেলায় অংশগ্রহণকারীর গৃহবধু বা মহিলারা মনে করেন এই মেলাতে জুয়া খেললে সারা বছরে সংসার সুখে থাকে। লক্ষ্ণী লাভ হয়। নিঃসন্তান গৃহবধুর সন্তান লাভ হয়। মনে এই আশা নিয়েই প্রতিবছর পুরাতন মালদার জুয়ার মেলায় ভিড় করেন সাধারণ ঘরের মেয়ে এবং গৃহবধূরা। আজ শনিবার সকাল থেকে মোকাতিপুর এলাকার খোলা আমবাগানে শুরু হওয়া মেলা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এই জুয়া খেলায় কোনও পুলিশের নিষেধাজ্ঞা থাকে না। বড়োলোক-গরিবের ভেদাভেদও থাকে না। মুলাষষ্ঠী তিথিতে প্রাচীনকাল থেকে পুরাতন মালদা পুরসভার মোকাতিপুরে এই মেলা চলে আসছে৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি৷