সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জাতীয় কৃষক খেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় সম্মেলন।
শুরুতেই সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে লড়াকু সৈনিক, কৃষক খেতমজুর নেতা ভাষা সংগ্রামী আব্দুল মতিন, খেতমজুর নেতা প্রয়াত আলাউদ্দিন আহমদ, বিপ্লবী কৃষক খেতমজুর নেতা শহিদ আব্দুস সামাদ দক্ষিণবঙ্গের কৃষক খেতমজুর নেতা প্রয়াত আব্দুল মতিন মুনীর, কৃষক খেতমজুর নেতা শহিদ আব্দুর রাজ্জাক ও কৃষক খেতমজুর নেতা আসাদ আলী সহ পার্টির নেতৃত্বে শ্রেণী সংগ্রামে শহিদ ও ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধসহ ৯০ ও ২৪ এর গণঅভ্যুথানে বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সভায় এবং সভাশেষে জাতীয় গনফ্রন্টের সমাবেশে জননেতা টিপু বিশ্বাস বলেন ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে আমরা সকলদল আন্দোলন করলেও অভ্যুত্থান করতে পারিনি স্বীকার করতেই হবে।
অভ্যুত্থান ৬৯,৭১,৫২, হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ সৃষ্টির পরে এতবড় সাড়া জাগানো অভ্যুত্থান আর হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিন দল হাজার হাজার সমাবেশ করেছে কিন্তু সংঘর্ষে যেতে পারেনি। সংঘর্ষে না যাওয়ার যে মানুষিকতা সেটাই ভ্রান্ত। ছাত্ররাই মনে করেছে হাসিনা ফ্যাসিস্ট কে উচ্ছেদ করতে হলে সংঘর্ষে যেতে হবে, বুক পেতে দিতে হবে। যার ফলে ওটা সম্ভব হয়েছে।
ফখরুদ্দীন মইনুদ্দিনের হাত ধরে হাসিনা ক্ষমতায় এসে দিনের ভোট রাতে করে, নির্বাচনের আগেই ফল ঘোষনা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। জনগন ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রদের কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে ১ দফা আন্দোলনে পরিনত করেছে। এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আমরা কমিউনিষ্টরা – বামপন্থিরা নেতৃত্ব দিতে পারিনাই।
কিন্তু আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিলো বুর্জোয়া-পেটি বুর্জোয়ারা। আর বুর্জোয়া-পেটি বুর্জোয়াদের নেতৃত্বে যেই আন্দোলন, সেই আন্দোলন থেকে জনগণের মুক্তি আসবে সেটা আমরা আশা করতে পারি না। যদিও তারা বলছে এটা ২য় স্বাধীনতা , এটা বিপ্লব। কিন্তু এটা মোটেই ২য় স্বাধীনতা বা বিপ্লব নয়। এতা স্বৈরাচারী হাসিনা উচ্ছেদের আন্দোলন, এটা অভ্যুত্থান।
শোষক শ্রেণীর নেতৃত্বে শোষণ মুক্তির আন্দোলন সম্ভব নয়। শোষক বদলের কামড়াকামড়ি। নেতৃত্ব হতে হবে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের-আপামর জনগণের, তবেই মুক্তি আসবে। চারু মজুমদারের খতমের লাইনেও আসবে না-নিবাচনেও আসবে না মুক্তি।
আর সংস্কার প্রসঙ্গে বলেন এই সংস্কার হয়তো কিছু হতে পারে। তবে জাতীয় গনফ্রন্টের ২৪ আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারন হিসেবে বলেন স্বৈরাচারী হাসিনা উচ্ছেদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ কে কোণঠাসা করা। ভারতীয় আধিপত্যবাদের মদদে স্বৈরাচারী হাসিনা রাজত্ব করেছে। বিনিময়ে আমরা পেয়েছে অসম নানান চুক্তি। আমরা নদীর ন্যায্য পানি পায়নি, বর্ডারে হত্যা হয়েছে ফেলানী সহ অসংখ্য, বাণিজ্যে মনোপলী। আন্দোলনের পরে ভারতের বানিজ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য পালটে যাচ্ছে। এখন ভারত কান্নাকাটি করছে- পর্যটন, চিকিৎসা, প্রসাধন, কাপড়, শস্য সবকিছু নিয়ে। অসম চুক্তির কারনে দেশের নদীগুলো অচল হয়ে গেছে।
শুধু সরকারের পরিবর্তন নয়, রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন, ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন ঘটাতে হবে তবেই মুক্তি পাবো। আজও শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেয়া হয় না। মজুরী কমিশন হয় না। নিহত শ্রমিকদের জন্য কোন কিছু করা হয় না। সিন্ডিকেট ভাঙ্গা হয় না, ৩৩ টাকা ধান বিক্রি করে ৬০ টাকায় মোটা চাল কেনার সামর্থ্য কৃষকের নাই। যারা খাদ্য উৎপাদন করে তারাই অভুক্ত ও অবহেলিত।
তিনি সরকারকে সংস্কার বিষয়ে বলেন যদি এটা বিপ্লবী সরকার হতো তবে আশানুরূপ ভরসা করা যেত। যেহেতু এটা বুর্জোয়াদের পাতানো সরকার তবু সেই সরকারের বিরোধিতা করছি না। কারন হাসিনা উচ্ছেদের সাথে তাদের অবদান আছে। তবে সংবিধান সংস্কারের জন্য নয়, সংবিধান বাতিল করে ন্তুন সংবিধান আনতে হবে। কারন ৭২ যারা সংবিধান তৈরিতে সাহায্য করেছিল তারা তো পাকিস্থানের ইয়াহিয়ার প্রাদেশিক সদস্য ছিল। এটাতো ইয়াহিয়ার ফ্রেমওয়ার্ক। সংবিধানে সকল দেশী – বিদেশী শোষণের হাতিয়ার উচ্ছেদ করে মৌলিক বিভাগ নির্দিষ্ট করে “ উপজাতী নয়” ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সহ সকলের অংশগ্রহণে সংবিধান সভার নির্বাচন চেয়েছেন জাতীয় গনফ্রন্টের পক্ষ থেকে।
তিনি আরো বলেন জামাতে ইসলাম একাত্তরে যে গণহত্যার সহযোগিতা করেছে তার জন্য আজও ক্ষমা চায় নাই। হাসিনা ফ্যাসিস্ট হলে ওরাও তো ফ্যাসিস্ট। তারা কিভাবে নির্বাচনের সুযোগ পায়। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হলে পাকিস্থানের দোসর জামায়াতে ইসলামি কে নিষিদ্ধ করতে হবে।
আর ধর্মের নামে রাজনীতি চলবে না। ধর্মের স্বাধীনতা থাকবে। “যার যার ধর্ম তার তার- রাষ্ট্র বাংলার সকল জাতিগোষ্ঠীর”। জামায়াতে ইসলাম ও তো পুঁজিপতিদের দালাল। এরাও তো চোরের পাহারাদার। এদের কর্মসূচীতে- গঠনতন্ত্রে শুধুই ধর্ম কে ব্যবহার করে সংগঠন গড়ে তোলার কথা লেখা। কোথাও সম্রাজ্যবাদ, দেশীয় লুটেরাদের উচ্ছেদ কর্মসূচী নাই। উল্টো এদের সম্পদ দেখলে বুঝা যায় এরা কারা। ধর্ম কে শোষণের হাতিয়ার বানিয়ে রেখেছে।
সমাবেশে সকল কৃষক খেতমজুর বাম্পন্থিদের কে আন্দোলনের আহবান জানান। কিন্তু নির্বাচন নয়-অভ্যুত্থানের জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান। মাওলানা ভাসানী কে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে তার মত করে লাল্টুপির ফৌজ গড়ে তোলার ডাক দেন।
এই লুটেরার রাষ্ট্র, বুর্জোয়াদের রাষ্ট্র ভাঙার আহবানে ও শ্রেণীর শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে আহবান জানিয়ে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় কৃষক সমিতির নব্য সাংঠনিক সম্পাদক রাশেদ রনি, সাধারন সম্পাদক প্রান্তিক কৃষক শুকুর আহমেদ, প্রচার সম্পাদক নন্দ কুমার, কেন্দ্রীয় সদস্য জিল্লুর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য একরাম হোসেন।