ট্রাম্প-জেলেনস্কি সংঘাতে রিপাবলিকানরা বিভক্ত হওয়ায় ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে দুইটি মূল শ্রেণী দেখা যাচ্ছে: একদল ইউক্রেনকে সহায়তা দেয়ার পক্ষে, এবং অন্যদল বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা, ইউক্রেনের প্রতি সহায়তার বিরোধী।
আরও পড়ুন…৪০ বছরের যুদ্ধ শেষ হচ্ছে তুরস্ক-পিকেকের
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার বাকবিতণ্ডাপূর্ণ বৈঠক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। ইউক্রেইনের জন্য কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ সহায়তার সম্ভাবনা এতে আরও ক্ষীণ হয়েছে। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউজে ওভাল অফিসের বৈঠকে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ট্রাম্প ও জেলেনস্কি।
ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রতি সহায়তা কমানোর পক্ষে এবং এটি মূলত তার বিদেশনীতি, যা “আমেরিকা প্রথম” নীতির উপর ভিত্তি করে। তার মতে, ইউক্রেনের সংকটের জন্য মার্কিন সরকার অতিরিক্ত খরচ করছে এবং মার্কিন স্বার্থের পক্ষে এটি ক্ষতিকর হতে পারে।
অন্যদিকে, রিপাবলিকানদের একটি অংশ, বিশেষত যারা ইউক্রেনের প্রতি সহায়ক, তারা মনে করেন যে রাশিয়ার আগ্রাসন ইউরোপে শান্তি বজায় রাখতে এবং আন্তর্জাতিক আইন রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরা বিশ্বাস করেন যে ইউক্রেনকে সহায়তা করতে পারলে, ভবিষ্যতে আরও বড় সংঘাত প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
এই বিভক্তির ফলে, মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের প্রতি সহায়তা বিল প্রস্তাব করা কঠিন হয়ে পড়েছে, এবং এটি প্রভাব ফেলতে পারে বাইডেন প্রশাসনের সামরিক সহায়তা পরিকল্পনার উপর।
ট্রাম্প-জেলেনস্কি সংঘাতে বিভক্ত রিপাবলিকানরা, ইউক্রেইনকে সহায়তার সম্ভাবনা ক্ষীণ। হোয়াইট হাউজে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
যে রিপাবলিকানরা দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেইনকে সমর্থন করে এসেছেন, তারা শুক্রবারের বৈঠকে ওই বাকবিতণ্ডার জন্য জেলেনস্কির কঠোর সমালোচনা করেছেন।
ওই বৈঠকে ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স প্রকাশ্যে ইউক্রেনীয় নেতাকে অপমান করেন এবং তাকে ‘অশ্রদ্ধাশীল’ বলে অভিযুক্ত করেন।
সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে তার সুর নরম করা, নয়ত পদত্যাগ করতে বলেন।
জেলেনস্কির সমালোচনা করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ওভাল অফিসে যা দেখেছি, তা খুবই অশ্রদ্ধাশীল ছিল। আমি জানি না, আর কখনও আমরা জেলেনস্কির সঙ্গে ব্যবসা করতে পারব কিনা।
বেশিরভাগ রিপাবলিকানই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের পক্ষ নিলেও, কয়েকজন রিপাবলিকান আবার ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে মিলে ইউক্রেইনের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন।
নিউ ইয়র্কের প্রতিনিধি মাইক ললার এক্সে লেখেন, ওভাল অফিসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেইনের বৈঠকে উভয়ের জন্যই সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে – একটি চুক্তি হতে পারেনি, যা নিঃসন্দেহে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করত।
নেব্রাস্কার মধ্যপন্থি রিপাবলিকান প্রতিনিধি ডন বেকন ইউক্রেইনকে সমর্থন দিয়ে বলেছেন, “আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির জন্য এ এক খারাপ দিন।”
“ইউক্রেইন স্বাধীনতা, মুক্ত বাজার ও আইনের শাসন চায়। তারা পশ্চিমা বিশ্বের অংশ হতে চায়। রাশিয়া আমাদেরকে এবং আমাদের পশ্চিমা মূল্যবোধকে ঘৃণা করে। আমাদের স্পষ্টই জানানো উচিত যে, আমরা স্বাধীনতার পক্ষে।”
তবে কোনও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাই সরাসরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্সের সমালোচনা করেননি।
রাশিয়া ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে মার্কিন কংগ্রেস কিইভের জন্য ১৭ হাজার ৫০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা অনুমোদন করেছে। তবে সর্বশেষ সহায়তা বিল পাস হয়েছে গতবছর এপ্রিলে।
সে সময় ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে ছিল সিনেট ও হোয়াইট হাউজ। তখনও রিপাবলিকানরা সহায়তা বিল পাসের গতি মন্থর করে দিয়েছিল তখনকার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পের চাপের মুখে। ফলে ইউক্রেইনে অস্ত্র সরবরাহে বিলম্ব হয় এবং এতে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেইনীয় সেনারা অসুবিধায় পড়ে।
ইবাংলা/ বাএ