প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার (০৩ মার্চ) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমতা, প্রস্তুতি ও সংকট ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিশনার হাজদা লাহবিবের সঙ্গে বৈঠককালে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন…৩ দিনের সরকারি সফরে সেন্ট্রাল আফ্রিকান সেনাপ্রধান
ইইউ কমিশনার রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় ৬৮ মিলিয়ন ইউরো সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন, যা বিশেষভাবে মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও মানবিক সংকটের শিকারদের সাহায্য করার জন্য প্রদান করা হবে। তবে তিনি উল্লেখ করেন যে, এই তহবিল রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য যথেষ্ট নয়, কারণ তহবিলের ঘাটতি বাড়ছে।
ড. ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা যা বছরের পর বছর ধরে চলমান, কিন্তু এর কোনো সমাধান এখনও হয়নি। তিনি এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আরও পদক্ষেপের কথা বলেন।
এছাড়া, বৈঠকে জলবিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ, বন্যা ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য ইইউ’র সহায়তাকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, এটি বাংলাদেশকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাবে।
হাজদা লাহবিব বলেন, চলতি বছর ইইউ রোহিঙ্গা সংকট, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা সম্প্রদায় ও আশ্রয়দাতা স্থানীয় কমিউনিটি এবং মিয়ানমারের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৬৮ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেবে। বিশেষ করে, মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার মানুষের জন্য এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
সমতা, প্রস্তুতি ও সংকট ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ইইউর এই কমিশনার বলেন, যদিও এ অর্থের পরিমাণ গত বছরের প্রাথমিক ইইউ অনুদানের চেয়ে বেশি, তবুও এটি রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি রোধ করার জন্য যথেষ্ট নয়, কারণ তহবিল ঘাটতি ক্রমশ বাড়ছে।
অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট মোকাবিলায় তার সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা।’ তিনি বলেন, এটি বছরের পর বছর ধরে চলছে, কিন্তু এখনো কোনো সমাধান নেই। কখন সমাধান হবে তার কোনো সময়সীমা নেই।
অধ্যাপক ইউনূস ইইউর কমিশনারের উদ্দেশে বলেন, আপনাকে বাংলাদেশে পেয়ে আমরা খুব আনন্দিত। জাতিসংঘের মহাসচিবও আসছেন। আমরা রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি। ইইউ কমিশনার বলেন, এই সংকটের একমাত্র সমাধান হলো শান্তি।
তিনি বলেন, আমাদের সব ধরনের দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, যার মধ্যে মানবসৃষ্ট দুর্যোগও অন্তর্ভুক্ত। ভুল তথ্য (ডিসইনফরমেশন) ছড়ানোও কিন্তু দুর্যোগের মধ্যে পড়ে।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে তারা নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ, জ্বালানি সংযোগ, বন্যা ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন…জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য ইইউর সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে উত্তরণের পথ সুগম করবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাবে।
তিনি বলেন, আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে কথা বলি, আর এটিই সেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি। নেপাল ও ভুটান দুই দেশই আমাদের কাছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিক্রিতে আগ্রহী।
ইইউ কমিশনার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতার ওপর জোর দেন এবং বলেন, ইইউ বাংলাদেশকে ‘উত্তম অনুশীলন’ এবং প্রস্তুতির কৌশল বিনিময়ের জন্য আগ্রহী। লাহবিব সংকটময় পরিস্থিতিতে দায়িত্ব গ্রহণের এবং অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
ইইউ কমিশনার বলেন, আপনি এক ব্যতিক্রমী সময়ে অসাধারণ কাজ করেছেন। আমার মূল বার্তা হলো, আমরা আপনাদের সঙ্গে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে প্রস্তুত রয়েছি। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি ইইউ’র সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পরিবর্তনের সময় দেখছি। আমরা জানি, যখন কিছু পরিবর্তন করতে চান, তখন প্রতিরোধ আসে। তাই অনেক কিছু করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভোট সম্ভবত এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
ইবাংলা/ বাএ