স্বাধীনতা দিবস বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় ও গৌরবের প্রতীক

ইস্রাফিল হাওলাদার
স্বাধীনতা দিবস বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় ও গৌরবের প্রতীক

মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ দেশে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপিত হয়। এই দিনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের স্মরণে পালিত হয়। প্রতিবারের মতো এবারও বিভিন্ন স্থানে সরকারি, বেসরকারি এবং সামাজিকসহ রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালিত হয়।

২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছর মহান স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের দেশের ইতিহাস অত্যন্ত গর্বিত এবং তা উদযাপন করার জন্য সরকারি, বেসরকারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এবারের স্বাধীনতা দিবসে নানা ধরনের কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতীয় কুচকাওয়াজ করেনি সরকার।

সকাল ৬.৩০ টায় সব সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এর সাথে, ২৬ মার্চ সকাল ৭ টায় রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ওউপদেষ্টা পরিষদ সদস্যরা ঢাকার শহীদ মিনার এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। একই সময়ে, ঢাকার প্লাজা এবং বিজয় দিবস চত্বরে বিভিন্ন সংগঠন তাদের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন স্বাধীনতা দিবসের সকালে জাতির উদ্দেশে এক ভাষণ দেন। এই ভাষণে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস এবং দেশের বর্তমান উন্নয়ন পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সরকার প্রধান স্বাধীনতা দিবসের উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে তার ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, উন্নয়ন ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং তরুণ প্রজন্মকে স্বাধীনতার মূল্যবোধ শেখার জন্য উৎসাহিত করেন।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং শহীদ মিনারে জাতীয় নেতারা, মুক্তিযোদ্ধারা এবং বিভিন্ন সংগঠন সমবেতভাবে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীও তাদের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। বিশেষ মন্ত্রিসভা বৈঠক এ দিনেও দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং তার অর্জনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি গৌরবময় আলোচনা করে থাকে।

আরও পড়ুন…উন্নত চিকিৎসার জন্যে তামিমকে দেশের বাইরে নেওয়ার পরিকল্পনা

কনসার্ট ও মঞ্চনাটক: স্বাধীনতা দিবসে দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রচার করতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এসব অনুষ্ঠানে দেশের জাতীয় সংগীত, মুক্তিযুদ্ধের গানের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়। টেলিভিশন এবং রেডিওতে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের গাথা, স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের নায়কদের জীবনকথা ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা হয়।

দেশের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে বিশেষ সভা, আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর জীবন, স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং দেশের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও দেশপ্রেম বিষয়ক সেমিনার এবং বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করে তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব চিত্র ও প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে গভীর ধারণা লাভ করে।

২৬ মার্চ দিনব্যাপী শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে বিভিন্ন স্থানীয় সংস্থা, সংগঠন এবং সশস্ত্র বাহিনী শহীদদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ও যুদ্ধ স্মৃতির স্থানসমূহে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশগ্রহণ করে এবং দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও কৃতিত্বের বিষয়টি তুলে ধরে।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নানা ধরনের মিছিল এবং শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এসব শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা হাতে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য প্রতীক নিয়ে চলে।

দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম (টেলিভিশন, রেডিও, দৈনিক পত্রিকা) বিশেষ প্রতিবেদনের মাধ্যমে স্বাধীনতা দিবসকে উদযাপন করে। এদিন প্রায় সব পত্রিকা স্বাধীনতা দিবসের উপর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে, যাতে বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের গল্প, বঙ্গবন্ধুর কৃতিত্ব এবং দেশের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়।

আরও পড়ুন…৪ দিনের সফরে চীনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

মহান স্বাধীনতা দিবস আমাদের জাতির আত্মপরিচয় ও গৌরবের প্রতীক। এটি শুধু একটি দিবস নয়, এটি একটি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক, যা আমাদের একে অপরকে শ্রদ্ধা করতে, দেশপ্রেমের মূলমন্ত্রে অটল থাকতে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে চিরকাল ধরে রাখতে অনুপ্রাণিত করে।

ইবাংলা/ বাএ

আত্মপরিচয় ওগৌরবেরপ্রতীক