প্রয়োজনে দেশের প্রচলিত আইন সংশোধন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের লোকবল বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আন্দোলনে যে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে- সেই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা হোক।
শনিবার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যদি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারিত হয় তাহলে এদেশের জনগণ তা মেনে নেবে জানিয়ে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার দাবি আমরা প্রকাশ্যে করেছি, লিখিতভাবে করেছি, সরকারকে জানিয়েছি। জনগণের সামনে প্রস্তাব আকারে আমরা তুলে ধরেছি।
আমরা চাই আওয়ামী লীগকে গণহত্যার ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের আওতায় আনা হোক। এ জন্য সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন করা যায় এবং আইন সংশোধন করা যায়।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতার বিরোধী অপরাধে মামলা করা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রী-এমপি ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে; সেই মামলাগুলোর দৃশ্যমান অগ্রগতি আমাদের সামনে নেই। জাতি অত্যন্ত প্রত্যাশা করে এই মামলাগুলো যেন দ্রুত নিষ্পত্তি হোক।
আরও পড়ুন…বিচারের আওতায় আনা হোক আওয়ামী লীগকে : সালাউদ্দিন আহমেদ
সেজন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা ও লোকবল বৃদ্ধি করা হোক। প্রয়োজনে বিভাগীয় পর্যায়ে ট্রাইবুনাল স্থাপন করা যায় কিনা, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে।
বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন বিলম্বিত করারও বিভিন্ন রকম পাঁয়তারা আমরা লক্ষ্য করছি মন্তব্য করে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা যেমন সংস্কার চাই, বিচার চাই আওয়ামী লীগের তেমনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের বিষয়টি সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে চাই।
ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন। জাতির সামনে অনেকবার তিনি বলেছেন। কিন্তু প্রায় সময় দেখা যাচ্ছে কিছুদিন পরপর বলা হচ্ছে নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনে; আবার জুনে থেকে ডিসেম্বরে এ রকম একটা শিফটিং দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জোরালো দাবি প্রধান উপদেষ্টা অতি অবশ্যই খুব দ্রুত নির্বাচনের রোড ম্যাপ দেবেন, যাতে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা যায়। এই দাবির সাথে হেফাজত ইসলামও একমত হয়েছে।
হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ২০১৩ সালে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের উপর যে নির্মম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার, তার সঠিক সংখ্যা এখন পর্যন্ত নিরূপণ করা হয়নি।
সেই হত্যাযজ্ঞের বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করা হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি ও বিচার চাওয়া হয়েছে। আমরাও তাদের সঙ্গে একমত।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আলেম-ওলামাদের উপরে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। জেলে ভরা হয়েছে এবং সীমাহীন নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে দায়ীকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই।
হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান, তিনি ছাড়াও হেফাজতের অন্যান্য নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ড. আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মূফতি মনির হোসাইন কাসেমী। শনিবার রাত সোয়া আটটার দিকে শুরু হয় এবং শেষ হয় রাত পৌনে দশটায়।