টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসরে প্রথমবারের মতো ট্রফি ঘরে তুলল ৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা অস্ট্রেলিয়া। অপরদিকে প্রথমবার ফাইনালে উঠে ভাগ্য বদলালো না নিউজিল্যান্ডের। বরং অদম্য অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৮ উইকেটে হেরে আরও একটি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে ব্যর্থ নিউজিল্যান্ড।
পুরনো পরিসংখ্যান বলে ১৯৮১ সালের পর নকআউটের কোনো ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। দুবাইয়েও সেই রেকর্ড অক্ষুণ্ন রাখতে অস্ট্রেলিয়া একপেশে ভঙ্গিতেই খেলেছে।
কেইন উইলিয়ামসন খেলেছিলেন দুর্দান্ত। ৪৮ বলে ৮৫ রানের অধিনায়কোচিত এক ইনিংসে নিউজিল্যান্ডকে এনে দিয়েছিলেন লড়াই করার মতো এক সংগ্রহ। কিন্তু দিন শেষে ডেভিড ওয়ার্নার আর মিচেল মার্শ প্রমাণ করে দিলেন কিউই অধিনায়কের ইনিংসটা যথেষ্ট ছিল না।
আরও পড়ুন : পাকিস্তান ক্রিকেট দল এখন ঢাকায়
অধিনায়ক একাই খেললেন, কিন্তু তাকে কেউই সেভাবে সঙ্গ দিতে পারলেন না। নিউজিল্যান্ডও সংগ্রহটাকে নিয়ে যেতে পারল না অস্ট্রেলিয়ার নাগালের বাইরে। ওয়ার্নার আর মার্শের একটা জুটিতেই কেল্লাফতে অস্ট্রেলিয়ার।
অস্ট্রেলিয়া ১৭৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামলে কখনোই মনে হয়নি কিউই বোলিং আক্রমণে তাদের রুখে দিতে পারবে। অথচ ম্যাচের আগে অজিদের ব্যাটিং লাইনআপের সঙ্গে কিউই বোলিংয়ের জমজমাট লড়াইয়েরই আলোচনা ছিল।
ম্যাচের তৃতীয় ওভারে অ্যারন ফিঞ্চের উইকেট নেওয়া গেলেও ডেভিড ওয়ার্নার-মিচেল মার্শের ৯২ রানের জুটিটি ছিল অপ্রতিরোধ্য। মারকুটে ব্যাটিংয়ের মেজাজটা ধরে রেখে দুজনেই দলকে এগিয়ে নিয়েছেন। বোল্ট ৩৮ বলে ৫৩ রান করা ওয়ার্নারকে বোল্ড করলেও অস্ট্রেলিয়া ততক্ষণে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ প্রায় নিয়ে নিয়েছে। নিয়ন্ত্রণ আরও পোক্ত হয়েছে মার্শের মারমুখী ব্যাটিংয়ে। রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়েই ৭ বল থাকতে জয় নিশ্চিত হয় অস্ট্রেলিয়ার।
সঙ্গী ম্যাক্সওয়েল ১৩ বলে ২৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। তবে ম্যাচ জেতানো মার্শ ৫০ বলে খেলেছেন ৭৭ রানের হার না মানা ইনিংস। তাতে ছিল ৬টি চার ও ৪টি ছয়। মার্শ-ম্যাক্সওয়েল জুটিতে যোগ হয় ৬৬ রান। নিউজিল্যান্ডের হয়ে দুটি উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের সময়সূচি
নিউজিল্যান্ড টসে হেরে ৪ উইকেটে করে ১৭২ রান। দুবাইয়ে টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য এই টস হেরে যাওয়াকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছিল না, যখন ড্যারিল মিচেল ও মার্টিন গাপটিল মেরে খেলার চেষ্টায় ছিলেন। এই রানের গতি কমে যায় হ্যাজেলউড মিচেলকে সাজঘরে ফেরালে।
তৃতীয় ওভারে আবার আক্রমণাত্মক গাপটিলকেও ফেরানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু ম্যাক্সওয়েলের ঘূর্ণিতে তার ব্যাটে লাগা বল ম্যাথু ওয়েড নিতে পারেননি। অথচ এই গাপটিলই কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসনকে সঙ্গে নিয়ে গড়েন ৪৮ রানের জুটি! জীবন পাওয়া গাপটিল অবশ্য ৩৫ বলে ২৮ রানের বেশি করতে পারেননি। তবে অজিরা সবচেয়ে বেশি আফসোস করার কথা উইলিয়ামসনকে নিয়েই।
আরও পড়ুন : একনজরে বাংলাদেশের ভরাডুবির বিশ্বকাপ
১১তম ওভারে কেন উইলিয়ামসনকে ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ ছিল। তখন কিউই অধিনায়ক ব্যাট করছিলেন ২০ রানে। কিন্তু স্টার্কের বলে ফাইন লেগে তার ক্যাচ ফেলে দেন জশ হ্যাজেলউড। হাত ফসকে গিয়ে পরে সেটি চারও হয়েছে!
দ্বিতীয় জীবন পাওয়া উইলিয়ামসন পুরো ইনিংসে কর্তৃত্ব করেছেন তারপর। অজি বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে ১৩তম ওভারে পূরণ করেন ৩২বলের হাফসেঞ্চুরি। সঙ্গী গ্লেন ফিলিপস ১৭ বলে ১৮ রানের বেশি অবদান রাখতে পারেননি। কিন্তু ফাইনালে জ্বলে উঠা কিউই অধিনায়কই রান-চাকা এগিয়ে নেওয়ার মূল দায়িত্ব পালন করেছেন। তার ৪৮ বলে করা সর্বোচ্চ ৮৫ রানের ইনিংসে ভর করেই নিউজিল্যান্ড পায় ১৭২ রান। কেনের ইনিংসে ছিল ১০টি চার ও ৩টি ছয়। শেষ দিকে নিশামের ৭ বলে ১৩ ও সেইফার্টের ৬ বলে ৮ রান স্কোরবোর্ড বাড়তে ভূমিকা রেখেছে। অজি বোলারদের মধ্যে ১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন জশ হ্যাজেলউড। ২৬ রানে একটি অ্যাডাম জাম্পার।
ইবাংলা/এএমখান/১৫ নভেম্বর, ২০২১