নান্দনিক রুচিবোধের বহিঃপ্রকাশে কিংবা গৃহসজ্জায় একটু প্রাণের ছোঁয়ার জন্য গাছের বিকল্প নেই। কংক্রিটের এই শহরে মাথা গুঁজে বাঁচার তাগিদে ইট-কাঠ-পাথরের কুঠুরিতেই আমরা খুঁজে নিই আপন আবাস।
তবে বাসা তো শুধু অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই নয়, নিবিড় স্বস্তি আর একান্ত নিজের মতো থাকতেই চাওয়া–পাওয়ার প্রতিফলনে সাজিয়ে–গুছিয়ে বাসাকে আমরা বাড়িতে রূপান্তরিত করি। কর্মব্যস্ত জীবনের ব্যর্থতা সফলতাগুলো বাইরে রেখে বাড়ি ফেরার এই প্রণোদনা বাড়িয়ে তোলে সবুজের ছোঁয়া।
প্রকৃতির পরশ পেতে ছাদ, বারান্দা, সিঁড়িঘর এবং প্রবেশদ্বারে গাছ রাখি আমরা। আর অন্দরসজ্জায় ব্যবহৃত গাছের বাহার দেখা যায় ড্রয়িংরুমে, বেডরুমে, লিভিংরুমে কিংবা যেকোনো মানানসই জায়গায়।
কিন্তু জানেন কি, সঠিক জ্ঞান না থাকলে প্রাণের প্রতিচ্ছবি ঘরে রাখা আপাতনিরীহ গাছ হতে পারে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির কারণ! মানতে কষ্ট হলেও এটাই সত্যি। বিশেষ করে বাড়িতে ছোট শিশু এবং পোষা প্রাণী থাকলে সৌন্দর্যবর্ধনে জনপ্রিয় অনেক গাছ হতে পারে মৃত্যুর কারণ।
তাই জেনে নেওয়া ভালো কোন গাছগুলো হতে পারে স্বাস্থ্যের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হুমকি। ক্রোটন বা পাতাবাহারের রূপে সব প্রকৃতিপ্রেমী মুগ্ধ। ফুল না ফুটলে কী হবে, পাতাতেই যে রং রূপের কারসাজি! আর তাই ঘরে-বাইরে বিভিন্ন জাতের পাতাবাহারের জনপ্রিয়তা।
কিন্তু ক্ষতিকর গাছের তালিকায় পাতাবাহারের নাম দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। পাতাবাহারের বিষাক্ত রস ও বীজ অ্যালার্জি বা ত্বকের জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে। আর কোনোভাবে পেটে চলে গেলে মন খারাপ, বিরক্তি, বমি বমি ভাব, বমি, মাথাব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে পারে।
শুধু তাই নয়, ত্বকের কাটাছেঁড়ার মাধ্যমে রক্তে মিশে গেলে যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয় তবে মৃত্যুও হতে পারে। পাতাবাহারের মতোই পাতার রং, নকশা, বৈচিত্র্য আর আকৃতির জন্য বিভিন্ন রকমের অ্যাগলোনিমার গ্রহণযোগ্যতা তুঙ্গে।
যত্ন এবং আলো-বাতাস কম লাগে বলে ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে জনপ্রিয়। তবে দর্শনধারী হলেও গুণবিচারে অ্যাগলোনিমার রস বিপজ্জনক। কাজের সময় এই রস চামড়ায় লাগলে জ্বালাপোড়া তো হবেই, চোখে লাগলে ডাক্তারের কাছে দৌড়াতে হবে।
শৌখিন ইনডোর প্ল্যান্টের মধ্যে অ্যাডেনিয়ামের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই গাছের মনোমুগ্ধকর ফুলের রংবাহারে চোখ ফেরানো মুশকিল, ফুলদানি নয়—ঘরের কোণে অ্যাডেনিয়াম অন্দরসজ্জায় যোগ করে আভিজাত্য।
ফুল ছাড়াও অ্যাডেনিয়ামগাছের আকৃতির আকর্ষণ এড়ানো মুশকিল। তবে জানেন কি, আফ্রিকান বেশ কিছু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী তাদের তিরের মাথায় বিষ দিতে অ্যাডেনিয়াম রস ব্যবহার করে! হ্যাঁ। এই গাছের মূল, কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখা থেকে দুধের মতো বিষাক্ত রস নিঃসৃত হয়, যা ত্বক ও মিউকাস টিস্যুর মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে মারাত্মক নেশা হয়।
মাত্রা কমবেশি হলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তাই যথাযথ সতর্কতা ছাড়া অ্যাডেনিয়াম হতে সাবধান। বড় বড় সবুজ পাতার লতানো গাছ—ঘরে বা বাইরে যেখানেই হোক না কেন, খুব সহজেই প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যায় মন্সটেরা।
প্রতিকূল আলো-বাতাসে যত্ন ছাড়াই বাড়ে বলে সবুজপ্রেমী প্রায় প্রতি ঘরেই দেখা মেলে এই গাছের। জানার বিষয়, মন্সটেরা পাতার রস সংবেদনশীল ত্বক বা চোখে গেলে তীব্র প্রতিক্রিয়া করে। আর ভুল করে এই পাতা চিবিয়ে ফেললে তো কথাই নেই—মুখ ও গলা ফুলে যাওয়া, কণ্ঠস্বর বিকৃতি, ঠোঁট ও মুখ অবশ হয়ে যাওয়ার মতো ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। সূত্র: প্রথম আলো।
ই বাংলা/ আই/ ২৩ জুন, ২১