মহানবী (সা.) সুগন্ধি পছন্দ করতেন এবং তিনি নিজেও ছিলেন সুগন্ধির আকর। সুগন্ধি ব্যবহার করা ছাড়াই তাঁর দেহ মোবারক সুবাস ছড়াত। তাঁর গায়ের সুরভি দূর থেকে অনুভব করা যেত। যারা তাঁর কাছে ঘেঁষত, তাদের হৃদয়-মানস জুড়িয়ে যেত। যেকোনো মজলিস তাঁর দেহের বিমল ঘ্রাণে সুরভিস্নাত হতো।
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.)-এর সুরভির চেয়ে হৃদয়কাড়া কোনো ঘ্রাণ আমি কখনো নিইনি।’ (ইমাম নববীর ব্যাখ্যাকৃত মুসলিম, হাদিস : ৮৬/১৫) তবু রাসুলুল্লাহ (সা.) সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। আনাস (রা.)-এর অন্য বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেন, ‘পৃথিবীর সুগন্ধি আমার কাছে প্রিয় করা হয়েছে এবং নামাজের ভেতর আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৩৯৩৯)
উপহার হিসেবে রাসুলুল্লাহ (সা.) সুগন্ধি পছন্দ করতেন এবং সুগন্ধি বিনিময়কে উৎসাহিত করতেন। যেমন হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.)-কে কেউ সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি গ্রহণ করতেন; ফিরিয়ে দিতেন না। কেউ সুগন্ধি দিলে ফিরিয়ে দিতেও তিনি নিষেধ করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৫৮৫)
মহানবী (সা.) কেমন সুগন্ধি পছন্দ করতেন : ফুলের নির্যাস, মৃগনাভি ইত্যাদির সুরভিত তেল দিয়ে আতর-সুগন্ধি তৈরি করা হয়। মেশক, আম্বারও উত্তম সুগন্ধি। মহানবী (সা.) মেশক খুব পছন্দ করতেন। হরিণের নাভি থেকে এটা তৈরি করা হয়। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম সুগন্ধি হলো মেশক।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৯১২)
মেশক, চন্দন ও জাফরানের সুগন্ধি রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যবহার করেছেন। বোঝা যায়, মহানবী (সা.) বৈচিত্র্যময় সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। আল্লামা ইবনে আবদুল বার (রহ.) ‘তামহিদ’ নামক কিতাবে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) জাফরানের সুগন্ধি ব্যবহার করেছেন।’
আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, রাসুলুল্লাহ (সা.) কী ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। উত্তরে তিনি বলেন, ‘মেশক ও আম্বারের সুগন্ধি রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যবহার করতেন।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৫০২৭)
‘আল-কামেল’ নামক গ্রন্থে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় সুগন্ধি ছিল মেশক ও চন্দন।
বিশেষ দিনে সুগন্ধি ব্যবহার সুন্নত : রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে সুগন্ধি পছন্দ করতেন। অন্যদের সুগন্ধি ব্যবহারের আদেশ দিয়েছেন। প্রাত্যহিক জীবনে সুগন্ধির ব্যবহার মুমিনের ভূষণ। মুমিনের চালচলনে সুরভিত হয় মানবপল্লী। তাই সুগন্ধির ব্যবহার মুমিনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। লোকসমাগমে, জুমার দিন ও ঈদের দিনে সুগন্ধি ব্যবহারের বিশেষ তাগিদ রয়েছে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন তোমরা যথাসম্ভব সুগন্ধি ব্যবহার কোরো।’ (নাসায়ি, হাদিস : ১৩৫৮)
ইবাংলা / এইচ / ২১ নভেম্বর, ২০২১