আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস আজ
রিসাত রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদন
২৪ জানুয়ারি, আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস। ২০১৯ সাল থেকে ইউনেস্কোর উদ্যোগে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে সাক্ষরতার হার বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী কালীন সময়ে যেখানে সাক্ষরতার হার ছিল প্রায় ১৬ শতাংশ, ৫০ বছরের ব্যবধানে এখন প্রায় ৭৫ শতাংশে গড়িয়েছে। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেলেও প্রশ্ন উঠে শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে। এনিয়ে তর্কবিতর্কের শেষ নেই।
প্রাথমিক শিক্ষা থেকে স্নাতক সবক্ষেত্রেই অভাবনীয় সাফল্য অর্জন হয়েছে বলে বুলি কপচালেও এর মান নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে শিক্ষাবিদগনের মতে। স্বাধীনতার পর দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মাত্র ছয়টি। আর এখন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে দেশে মোট বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে ১৫৮টি। কিন্তু সকল বিশ্ববিদ্যালয় কি পারছে শিক্ষার গুণগত মান অর্জন করে শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করতে?
বর্তমান সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট উপাদানগুলো সংখ্যাগত দিক দিয়ে উন্নতি দৃশ্যমান কিন্তু গুণগত মান অর্জনে সন্ধিহান। কোভিড-১৯ এ শিক্ষাব্যবস্থায় যে ক্ষতি হয়েছে তা এখনো পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এর মাঝে আবার ৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সেশনজটে পড়ার ভয় ঢুকে গিয়েছে। দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঠিক যে সময়ে সেশনজটমুক্ত শিক্ষা-কার্যক্রম শুরু করেছিল সেই সময় করোনা মহামারীর জন্য কমপক্ষে এক থেকে দেড় বছরের জটে পতিত হলো।
এরূপ অবস্থায় সরকারের শিক্ষামন্ত্রী অনেকবার চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এর কথা মাথায় রেখে প্রথাগত শিক্ষা ব্যাবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষাব্যবস্থাকে পুরো যুগোপযোগী করে তুলতে বিভিন্ন সময়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে সমন্বিত শিক্ষা আইন করার কথা থাকলেও আইনের খসড়া নিয়ে ১১ বছর ধরে কেবল আলোচনাই হয়েছে, আইনটি আর হয়নি। প্রাথমিকস্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার গুণগত মান অর্জন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট এর সহযোগী অধ্যাপক দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের সাক্ষরতা বেড়েছে কিন্তু বিভিন্ন সরকারি তথ্য উপাত্ত মতে বাংলা ভাষা রপ্ত করা, পঠন-পাঠন এর ক্ষমতা বিবেচনা করলে এই হার ভয়াবহ কম। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের অন্যতম কারণ গণহারে জিপিএ ৫.০০ এর ট্রেন্ড। শিক্ষার্থীরা যোগ্যতার বেশি মূল্যায়ন পাচ্ছে যা একটি আত্মঘাতী প্রক্রিয়া। এতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চা কমে যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের অর্জনের কথা বলে শেষ করা যাবে না কিন্তু এই অর্জনকে সাসটেইনেবল করতে হবে। সলিড নলেজ দ্বারা পরিপূর্ণ হতে হবে।
গভর্নমেন্ট কলেজ অফ অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সাইন্সের ২০১৭-১৮ সেশনের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা রূপা মনে করে করেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সব সময়ই কম বেশি বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বরাবরই, যার কারনে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হতে পারে নি। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা এখনো ও বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না,আমাদের পড়াশোনা শুধুমাত্র বইয়ের পৃষ্ঠায় আবদ্ধ। রাজধানীর বাইরে দেশের অনান্য স্কুল কলেজের পড়াশোনার মান নিয়ে বিশেষজ্ঞরা চিন্তিত, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি সাধন হয়েছে তা নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কতটুক কার্যকর হবে তা দেখা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ইবাংলা/ এইচ/ ২৪ জানুয়ারি, ২০২২