দেশ ও জনগণের সেবায় ২০২১ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্যদেরকে শোক, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণের মধ্য দিয়ে পালিত হলো পুলিশ মেমোরিয়াল ডে ২০২২।
পুলিশ মেমোরিয়াল ডে এর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (০১ মার্চ) সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এবং জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গ রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজ চত্বরে নবনির্মিত পুলিশ মেমোরিয়ালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি সম্মান জানান। এসময় একটি সুসজ্জিত পুলিশ দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।
বাংলাদেশ পুলিশের সকল মেট্রোপলিটন, রেঞ্জ এবং জেলা ইউনিটে যথাযোগ্য মর্যাদায় পুলিশ মেমোরিয়াল ডে ২০২২ পালিত হয়েছে। পরে পুলিশ স্টাফ কলেজ কনভেনশন হলে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গকে স্বীকৃতি স্মারক প্রদান করা হয়।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) মোঃ মাজহারুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিগণ, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ এবং জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার মত চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ কাজগুলো বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন। এগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়ন না হলে সমাজে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা ঘটে, উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয়। পুলিশ এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে।
তিনি বলেন, পুলিশের ছোটখাট কোন ঘটনা ঘটলে আমরা তা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে থাকি। তার চেয়ে আমরা এমন ভাবতে পারি যে, পুলিশ জেগে থাকে বলেই রাতে আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারি। পুলিশকে সবসময় সম্মান ও শ্রদ্ধার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত। ছোটখাট ভুল হলে আমরা তা সংশোধনের জন্য পরামর্শ দিতে পারি।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের লক্ষ্য পূরণে নিজ দায়িত্বের বাইরেও সমাজের উন্নয়নে পুলিশ অত্যন্ত যোগ্য। তিনি বলেন, বাঙালির ইতিহাস শোষণ বঞ্চনার ইতিহাস, দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। জাতির পিতার দর্শন ছিল সোনার বাংলা গড়ে তোলা এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের কাজের মধ্যে জাতির পিতার দর্শনের চেতনা থাকতে হবে। আপনারা নৈমিত্তিক দায়িত্ব পালন তো করবেনই এর বাইরে কিভাবে মানুষের কল্যাণ করা যায়, তাদের পাশে দাঁড়ানো যায়, তাদেরকে সহযোগিতা করা যায় তা ভাবতে হবে। ফলে দেশ উপকৃত হবে, জাতি উপকৃত হবে, সমাজ উপকৃত হবে।
এ প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, নৈমিত্তিক কাজের সঙ্গে শুধু একটি দিন ইউনিয়ন কাউন্সিলে বসে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনসাধারণের সঙ্গে বসেন। গ্রামের যুবকদের, বেকারদের বা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পরামর্শ দিয়ে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজের ব্যবস্থা করে দিলে তারা আর অন্ধকারে থাকবে না। এক্ষেত্রে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
সিনিয়র সচিব কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তাদের পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের পরিবারের যোগ্য সদস্যদের অগ্রাধিকার দেওয়ার আহবান জানান তিনি।
আইজিপি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে উদযাপিত হচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় আজ আবার একত্রিত হয়েছি আমরা। তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমরা ৩৪৬ জন সহকর্মীকে হারিয়েছি, এরমধ্যে ১৩৮ জনকে কর্তব্যরত অবস্থায় হারিয়েছি।
তিনি বলেন, হিরোকে যে জাতি স্বীকৃতি দিতে পারে না, সে জাতি হিরো তৈরি করতে পারে না। বাঙালিকে বীরের জাতি আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা প্রমাণ করেছি জাতিগত বীরেরা কি করতে পারে। যখনই সুযোগ পেয়েছে বাঙালি জাতি প্রমাণ করেছে আমরা হিরো।
আইজিপি বলেন, শান্তির সময়ে পুলিশ যুদ্ধে লিপ্ত থাকে। এ যুদ্ধ অশান্তির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, যারা সমাজের শান্তি, নিরাপত্তা বিঘ্ন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে। আমরা ২৪ ঘন্টা এ যুদ্ধে লিপ্ত। যুদ্ধ হলে ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চিত। আমরা যেহেতু প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করছি, সেজন্য আমরা প্রতিবছর আত্মত্যাগও করছি।
কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের অবদানের কথা স্মরণ করে আইজিপি বলেন, তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা, পরিবারের জন্য সববেদনা এ দুই লাইন পর্যাপ্ত নয়। আমরা আমাদের সহকর্মীকে হারিয়েছি, প্রিয় মুখকে হারিয়েছে পরিবার। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি হুমকির মুখে।
এর বিরাট একটা অনুরণন রয়েছে। সেই পরিবারটিকে ঘুরে দাঁড়াতে আরও ২০ বছর লাগে, সেই পরিবারটিকে কিসের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা তারাই বুঝে। আমরা তাদেরকে সর্বোচ্চ মহিমান্বিত দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করে থাকি। আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে বিপন্ন পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।
পুলিশপ্রধান সবশেষে বলেন, যেহেতু আমরা সবসময় যুদ্ধাবস্থার মধ্যে থাকি, প্রফেশনাল সেফটি নিশ্চিতেও চেষ্টা করে যাচ্ছি। কোন সদস্য অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়, তাদেরকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হয়। তিনি বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঢাকায় একটি ডিভিশনাল হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে।
ইবাংলা/ জেএন/ ১ মার্চ, ২০২২