উপকূলীয় অঞ্চলে দিনদিন বিস্তৃত হচ্ছে ভুট্টার চাষ

মিজানুর রহমান (পটুয়াখালী) কুয়াকাটা প্রতিনিধিঃ-

দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে দিনদিন বিস্তৃত হচ্ছে ভুট্টার চাষ। অনুকূল আবহাওয়ায় আগাম চাষে মিলেছে বাম্পার ফলন। চাষীরাও পাচ্ছেন ভালো দাম। মিষ্টি পানির সংরক্ষণ বাড়ানো গেলে এবং প্রশিক্ষণ পেলে প্রতি মৌসুমে এখাত থেকেই আয় হতে পারে কোটি কোটি টাকা। কৃষি অফিসের সহয়তা না পাওয়ার কথা জানালেন কৃষকরা। আর কৃষি অফিস বলছে সহয়তা দেয়া হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপকূলের কৃষকরা দফায় দফায় ভুট্টার চাষ করছেন। কারো ক্ষেত ভরা ভুট্টা গাছের ফলন কাটার উপযুক্ত হয়েছে। ৫/৬ ফুট উচু গাছে বাতাসে দুলছে। কারো কারো ক্ষেতে কেবল মাত্র ফল এসেছে। চাষী পানির সেচ দিচ্ছেন। আবার কারো ক্ষেতের গাছ ২/৩ ফুট উচু হয়েছে। কৃষক গাছের গোড়ায় মাটি টেনে দিয়ে পরিচর্যা করছেন। কেউ ফলন কেটে বিক্রয় করেছেন। এখন ভুট্টা গাছের কাট জ্বালানির জন্য রোদে শুকাচ্ছেন।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কম পরিশ্রমে ভালো ফলন, উচ্চ বাজার চাহিদা, বেশ লাভজনক হওয়ায় উপকূলে দিনদিন বাড়ছে হলুদ মৌসুমী ভুট্টা চাষ। স্বল্প খরচে অধিক লাভের ফলে আগাম ভুট্টা চাষে কৃষকদেরও আগ্রহ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে আগাম চাষে মিলেছে বাম্পার ফলন। মৌসুমের দের মাস আগে বাজারে আসায় চাষীরাও পেয়েছেন উচ্চ মূল্য।

মিষ্টি পানির সংকটসহ বৃস্টি না থাকায় অনেক এলাকায় শুকিয়ে মরে যাচ্ছে গাছ। ঝড়ে যাচ্ছে ফল। ফলে কাংখিত লাভ না পাওয়াসহ ক্ষতির শংকায় রয়েছেন অনেক কৃষক। এ অঞ্চলে প্রতি শতক জমিতে ২ মন করে ভুট্টা উৎপাদিত হয়। যা উৎপাদনের খরচের চেয়ে দ্বিগুন লাভ হয়। শুধু তাই নয় ভুট্টাগাছ জ্বালানি, গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে পাতা ব্যবহার করা হয়।

এছাড়া ভুট্টার আটা, মৎস খাদ্য, মুরগীর খাবারসহ নানা তালিকায় রয়েছে। বর্তমান ভুট্টা কৃষি বিপ্লব ঘটাতে ও কৃষকের অর্থনৈতিক চাহিদা মিটাতে অর্থকরী ফসলের তালিকায় রয়েছে। সাধারনত ইরি-বোর চাষ অনুপযোগী জমিতে ভুট্টার চাষ করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় কৃষি ফসল উৎপাদনে উন্নত প্রশিক্ষণ না থাকায় কৃষির তেমন বিপ্লব ঘটেনি। সে সময় বিঘা প্রতি ফলন কম হওয়ায় উৎপাদন অনেকটা বন্ধ করে দেয় কৃষকরা। বর্তমানে উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড জাতের ভুট্টা চাষে মনোনিবেশ করছেন কৃষকরা।

ভুট্টা যদিও কয়েকশ বছর আগের পুরানো ফসল। যার উৎপত্তিস্থল মেক্সিকো দেশে। কালের আবর্তে ভুট্টা চাষে আগ্রহ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন দেশে। কৃষিবিদদের উন্নত প্রযুক্তি ও উৎভাবনার মাধ্যমে হাইব্রীড ভুট্টা বীজ নামে পরিচিত। বাংলাদেশের মানুষ কৃষি নির্ভরশীল। তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ভুট্টাকে কৃষি সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে বেচে নেয় কৃষকরা।

সরেজমিন ঘুরে কুয়াকাটা সংলগ্ন লতাচাপলী ইউনিয়নের মম্বিপাড়া গ্রামের আঃ জব্বার বিশ্বাস, আলমগীর হোসেন, মুসুল্লীয়াবাদ গ্রামের মাহতাব মুসুল্লী, খলিলুর রহমান, মিশ্রিপাড়া গ্রামের আঃ লতিফ হাওলাদার, সায়েদ প্যাদা, দিয়ারআমখোলা গ্রামের রুস্তুম আলী, জাকির হোসেন, আল-আমিন, থঞ্জুপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন-এদের সাথে কথা হয়।

তারা জানান, ভুট্টা চাষে অল্প পরিশ্রমে, স্বল্প খরচে বেশী ফলন পাওয়া যায়। বাজারেও বেশ চাহিদা রয়েছে। আর আগাম ফল আসলে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাই তারা ভুট্টা চাষ করছেন। উন্নত প্রশিক্ষণ পেলে ভুট্টা উৎপাদনে তারা বিপ্লব ঘটাতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.আর.এম.সাইফুল্লাহ বলেন, পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে ভুট্টা চাষের জন্য ১২ শত কৃষককে সহায়তা দেয়া হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলার জমি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী, এ বছর ১২’শ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। আগাম চাষাবাদের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। কুয়াকাটায় ভুট্টা ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভুট্টার বহুমুখি ব্যবহার হয়।

ইবাংলা/ জেএন/ ১৫ মার্চ, ২০২২

Contact Us