আ. লীগের বঙ্গভবন ইউনিট কমিটির শীর্ষ পদে মাদক ব্যাবসায়ি ও জামাত কর্মী
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
মাদক ব্যাবসায়ি ও জামাত সম্পৃক্ত ব্যাক্তিদের দিয়ে ইউনিট কমিটি গঠনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে মতিঝিল থানাধীন ৯ নং ওয়ার্ড এর বঙ্গভবন ইউনিট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন…পিএসসির শর্ত ভঙ্গ ও ট্রাইব্যুনালের আদেশ অমান্য করে পদোন্নতি
সূত্রমতে জানা গেছে ২০০০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জামাতের একনিষ্ঠ কর্মি ও পরবর্তীতে ওয়ান ইলেভেন প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যে পালিয়ে যাওয়া রফিকুল ইসলামকে মতিঝিল থানার ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বঙ্গভবন ইউনিটের সভাপতি ও ২০১৯ সালে মতিঝিল থানার মাদক মামলার আসামী ও এলাকার চিহ্নিত ইয়াবা ব্যাবসায়ি সোহেল খানকে সাধারন সম্পাদক হিসেবে ঘোষনা দেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঢাকা ৮ এর সাংগঠনিক টিম।
সূত্র জানায়, ৩ জানুয়ারী ২০২২ তারিখে মতিঝিল থানার ৯ নং ওয়ার্ড এর আরামবাগ উত্তর, আরামবাগ দক্ষিণ, ফকিরাপুল বাজার, ফকিরাপুল দক্ষিণ, মতিঝিল ও বঙ্গভবন মিলিয়ে মোট ৬ টি ইউনিটের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
দীর্ঘ যাচাই বাছাই এর পর গত ৭ জুলাই ২০২২ বৃহস্পতিবার ফকিরাপুল বাজার ও মতিঝিল ২ টি ইউনিট বাকি রেখে বাকি ৪ টি ইউনিটের কমিটি ঘোষনা করা হয়। মাদক ব্যাবসায়ি ও জামাতের লোকদের দিয়ে ইউনিট কমিটি ঘোষনা দেয়ায় এলাকার প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মিদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ৯ নং ওয়ার্ডের সুপরিচিত জামাত কর্মি রফিকুল ইসলাম ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতার এড়াতে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমায়। দীর্ঘ ১২ বছর পর ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতির কারনে দেশে ফিরে আসে রফিকুল। দেশে ফিরেই এলাকার হাইব্রীড আওয়ামী লীগ কর্মি ভাই নুরুন্নবীর সহায়তায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে কোন একটি পদ পেতে জোর তদবীর শুরু করে।
অবশেষে বঙ্গভবন ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ লাভের মাধ্যমে তার এ প্রচেষ্টা সফল হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতাকর্মিদের অভিযোগ সাংগঠনিক টিমকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে এই পদ বাগিয়ে নেয় সে।
অপরদিকে মতিঝিল থানার এজাহারভুক্ত মাদক মামলার আসামী ও এলাকার চিহ্নিত ইয়াবা ব্যাবসায়ি হওয়া স্বত্ত্বেও সোহেল খান বাগিয়ে নেয় বঙ্গভবন ইউনিটের সাধারন সম্পাদকের পদ। ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাদী মতিঝিল থানার এস আই মোঃ আজিজুল হক সুমন (বিপি-৮৪০২০৯৫৬৭৬) কর্তৃক ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) এর ১০(ক)/ ৪১ ধারায় দায়েরকৃত ইয়াবা বিক্রির মাদক মামলার (মামলা নং ২৭) ৩ নং আসামী সোহেল খান।
আরও পড়ুন…আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই: এনামুল হক শামীম
মামলাটি এখনো চলমান। এরপরেও সোহেল খান কিভাবে ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বঙ্গভবন ইউনিটের সাধারন সম্পাদক পদ লাভ করলো তা রীতিমতো এক বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে এলাকার প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মিদের মধ্যে।
উল্লেখ্য, মতিঝিল থানাধীন ৮, ৯ ও ১০ নং ওয়ার্ডের সদস্য সংগ্রহের সার্চ কমিটি সহ ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানার কমিটি গঠনের জন্য ঢাকা-৮ সাংগঠনিক টিমের আহ্বায়ক কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ঢাকা-৮ সাংগঠনিক টিমের আহ্বায়ক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ সভাপতি জনাব সাত্তার মাসুদ ও সদস্য সচিব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক-১ জনাব মোর্শেদ কামাল।
এছাড়া উক্ত সাংগঠনিক টিম কমিটিতে সদস্য হিসেবে আরো আছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য জনাব মাসুদ সেরনিয়াবাত, সাহাবুদ্দিন সাহা এবং গিয়াসউদ্দিন সরকার পলাশ।
জামাত ও মাদক সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের দিয়ে কিভাবে মতিঝিল থানাধীন বঙ্গভবন এলাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকার আওয়ামী লীগ ইউনিট কমিটি গঠিত হলো তা জানতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক-১ জনাব মোর্শেদ কামাল এর সাথে একাধিবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয় জানতে সাংগঠনিক টিমের আহবায়ক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ সভাপতি সাত্তার মাসুদকেও মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। সাংগঠনিক টিমের অন্যতম সদস্য ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য জনাব মাসুদ সেরনিয়াবাত এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, ওই ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাত্তার মাসুদের সঙ্গে কথা বলেন।
আরও পড়ুন…আ লীগ সরকারকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে পারবে না বিএনপি
টিমের আরেক সদস্য ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য গিয়াসউদ্দিন সরকার পলাশ মুঠোফোনে বলেন, ৫ সদস্যের সাব কমিটি করে দেয়া হয়েছিলো ওই কমিটি ১৫০ জন সদস্যের নামের তালিকা জমা দিলে চার মাস পরে যাচাবাছাই করে উক্ত ইউনিট কমিটি দেয়া হয়।
এই চার মাসের মধ্যে কোন সদস্য বা কর্মী তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেনি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনে বলেন কোন কমটিরি শীর্ষ পদে থাকা কোন নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকে বাদ দেয়া হবে।
৯ নং ওয়ার্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবীন এক আওয়ামী লীগ নেতা মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, মোর্শেদ কামাল, সাত্তার মাসুদ এলাকার কে কেমন তা তো জানার কথা নয়। তাদের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দিকনির্দেশনা নিয়েই কমিটি করতে হয়েছে। ফলে এই কুকর্মটি এলাকার ভিতর থেকেই হয়েছে। থানা বা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাদের মাধ্যমেই এই নামগুলো উনাদের কাছে গিয়েছে। অতএব কারা দায়ী তা বোঝা খুব একটা অসম্ভব কি?
এ বিষয়ে জানতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি বশিরুল আলম খান বাবুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,-থানা কমিটিকে ইউনিট কমিটি গঠনে কোন দায়িত্ব দেয়া হয়নি। সরাসরি মহানগর কমিটি এই ইউনিট কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। আরও পড়ুন…নড়াইলে জমি দখলকারীদের হামলায় আহত ৭
তিনি আরও বলেন, আমি এই মতিঝিলের সন্তান, আমরা বা আমি জানি এই এলাকায় কারা কি করে। মতিঝিলের চাঁদাবাজরা ভূয়া হোল্ডিং নাম্বার ব্যবহার করে এই এলাকার ভোটার হয়েছে। মূলত তারাই মহানগর কমিটিকে ভুলভাল বুঝিয়ে এই বিতর্কিত কমিটি কয়েছে। এই বিষয়ে জানতে ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাইনুকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মি এই প্রতিবেদকের কাছে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মোর্শেদ কামাল, সাত্তার মাসুদ, মাসুদ সেরনিয়াবাত এর মতো পরিচ্ছন্ন আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বারা এমন বিতর্কিত, স্বাধীনতা বিরোধী ও মাদক ব্যাবসায়িরা কিভাবে বঙ্গভবন ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের পদ লাভ করে তা কিছুতেই গ্রহনযোগ্য নয়। এতে দলের সাংগঠনিক বিশৃংখলা সৃষ্টি হবেই। অবিলম্বে এই কমিটি বাতিলের জোর দাবী জানান তারা।
ইবাংলা/টিএইচকে/৩০ জুলাই,২০২২