পিএসসির শর্ত ভঙ্গ ও ট্রাইব্যুনালের আদেশ অমান্য করে পদোন্নতি

বিশেষ প্রতিবেদক

রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় করে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, পিএসসির শর্ত ভঙ্গ ও প্রশাসনের ট্রাইব্যুনাল কোর্টের স্ট্যাটাসকোর আদেশ অমান্য করে পদোন্নতি প্রদান। অডিট ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কতিপয় অসাধু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন যাবৎ প্রশাসনিক নিয়ম কানুন উপেক্ষা করে একটার পর একটা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেই চলছে। মূলত এসব অনিয়ম অব্যবস্থাপনার কারণে সৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি এবং জনগণের অর্থ অপব্যবহারের বিরুদ্ধে তার সরকারের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, জনগণের অর্থ নিয়ে কোন অনিয়ম বা অসততা বরদাশত করা হবে না। তারপরেও থেমে নেই সরকারি দফতরেরে দুর্নীতি ও অর্থের অপচয়।

রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত অডিট ভবনের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ৫৭৪ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি নিয়ে নানা লুকোচুরির অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে প্রশাসনিক দুর্বলতা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এসব অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন…উপজেলায় ৪৯২ কর্মকর্তার নতুন পদ প্রস্তাব বাতিল

তাদের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে অডিট শাখার হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এমনটি জানালেন, অডিট ভবনের একাধিক কর্মচারী কর্মকর্তারা তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে ‘ইবাংলা’ প্রতিবেদককে জানান, অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ এবং অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এসএএস পরীক্ষা সংক্রান্ত অনিয়ম দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতা চরম আকার ধারণ করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একই পরীক্ষার রেজাল্ট তিনবার ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৯ সালে এসএএস পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিও হয়েছে।

প্রথমবার ফলাফল প্রকাশ করে ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর। সেই পরীক্ষায় পাশ দেখানো হয় ৫৭৪ জনকে। একই পরীক্ষার ৯ মাস পর দ্বিতীয়বার ফলাফল প্রকাশ করা হয় ২০২০ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর সকালে। এ পর্যায়ে উত্তীর্ণ করা হয়েছে ৫৫০ জনকে এবং একই দিন বিকেলে তৃতীয়বার ফলাফল প্রকাশ করে এতে পাস করানো হয় ৫৪৮ জনকে। এসব হঠকারী সিদ্ধান্তে ঘুষ দুর্নীতি ও অনিয়ম জড়িত বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, পিএসসির ক্লিয়ারেন্স এর শর্ত প্রতিফলন না করেই পদোন্নতি প্রদান! অনুসন্ধানে জানা যায়, সিএজি অফিস উপরে উল্লেখিত পরীক্ষার বিগত ৬-৯-২০২০ তারিখের বিকেলে তৃতীয় ফলাফলের ভিত্তিতে পিএসসি থেকে সুপারদের ক্লিয়ারেন্স প্রদান করেন।

পিএসসির ৯ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখের ক্লিয়ারেন্সপত্রে তিন নাম্বার কলামে শর্ত সুস্পষ্ট উল্লেখ করেছেন যে, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আদালতে কোন মামলা পদ সংরক্ষণ আদেশ বিভাগীয় মামলা হয়ে থাকলে তা নিষ্পত্তি বা এত সংক্রান্ত সকল আদেশ প্রতিপালন সাপেক্ষে পদোন্নতির সুপারিশ কার্যকর করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

অথচ তৃতীয় রেজাল্টে যে ২৬ জনকে ফেল করানো হয় তারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় রেজাল্ট বাতিল চেয়ে আদালতে রিট করেন। আদালত উক্ত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় রেজাল্ট বাতিল করে প্রথম রেজাল্ট বহাল রাখেন। প্রথম রেজাল্ট বহাল রাখলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় রেজাল্ট বাতিল হয় এবং সেই সাথে তৃতীয় রেজাল্টের ভিত্তিতে পিএসসি থেকে আনা ক্লিয়ারেন্সও বাতিল হিসেবে গণ্য হয়।

পিএসসির ক্লিয়ারেন্স বাতিল হলে তাদের প্রাপ্ত সুপারপদ নিয়মিত করণীয় বাতিল হবে। অর্থাৎ ৯ -১২- ২০১৯ তারিখের রেজাল্ট এর প্রেক্ষিতে তাদের পুনরায় ক্লিয়ারেন্স না হওয়া পর্যন্ত সুপার পদে রেগুলার হওয়ার কোন নিয়ম নেই। সুতরাং সুপার পদে রেগুলার না হইলে এএন্ডএও পদে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য নয়। দ্বিতীয় শ্রেণি চার্জে থেকে প্রথম শ্রেণীর চার্জে দেওয়ার বিধান নাই।

এখানে উল্লেখ্য যে ৯/১২/২০২০ তারিখে পদোন্নতি ক্লিয়ারেন্স হয়। এবং মামলা হয়েছে ৩-১২/২০১৯ তারিখে। উক্ত মামলার রায় হয়েছে ৮-১২/২০১৯ তারিখে। এক্ষেত্রে তথ্য উপাত্ত প্রমাণ করে যে, সিএন্ডএজি অফিস মামলার রায়ের কপি গ্রহণ করেন ১৫/১২/২০২০ তারিখে।

আরও পড়ুন…প্রাণঘাতি তামাক পণ্যের ব্যবহার বন্ধে ঐক্যবদ্ধের আহবান

তারপরেও ১৭-১২ ২০২০ তারিখে সকল নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে সুপার পদে ১২ হাজার ৫০০ টাকা স্কেল থেকে ১৬ হাজার টাকার স্কেলে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। যা নিয়ম-নীতি ও সর্বোপরি আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে দুর্নীতি এবং অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে করা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতি সাধন করা হয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, পিএসসি শর্ত অমান্য এবং আদালতের রায়সহ অদৃশ্য কারণে সকল শর্ত উপেক্ষা করে ৪৮০ জনকে পদোন্নতি দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন করা হয়েছ । তথ্যসূত্র বলে, পদোন্নতি বঞ্চিতদের মধ্যে কয়েকজন বাদী হয়ে বিগত ১৭-১২-২০২০ তারিখের পদোন্নতির কার্যক্রম বাতিল ও স্থগিত চেয়ে পুনরায় মামলা করে এবং আদালত সকল কার্যক্রম স্থগিত করে ১৮/ ৫ /২০২২ তারিখে। উক্ত মামলা নম্বর ০৫/ ২০২২ রায় প্রদান করেন।

জানা গেছে, পিএসসি শর্ত এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও দুর্নীতির মাধ্যমে আবারো পদোন্নতি প্রদান। বিজ্ঞ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরেও তাদের এএন্ডএও পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য ২৯১ জনের ডিপিসি করেন।

চলতি বছরের ১৮ মে স্ট্যাটাসকোর আদেশ ২৩ মে সিএসসি অফিস গ্রহণ করার পরও বিধি বহির্ভূতভাবে এএন্ডএও পদে ২৩-৬-২০২২ তারিখে ১০০ জনের পোস্টিং করা হয়েছে, যা আদালত অবমাননা এবং দেশের প্রচলিত আইনকে অসম্মান করার শামিল।

আরও পড়ুন…উজবেকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনে গুরুত্বারোপ

অতিরিক্ত উপ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (প্রশাসন) এ কে এম হাছিবুর রহমান স্বাক্ষরিত পোস্টিং অর্ডার দেয়া হয়। এসব বিষয়ে এডমিন হাছিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কিছুই জানেন না বলে এ প্রতিবেদককে জানান।

তিনি আরো বলেন, পুরো বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখা জানেন। আপনারা চাইলে সেখান থেকে তথ্য নিতে পারেন। এসব বিষয়ে অডিট ভবনের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উক্ত ঘটনায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠানের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্য করা হয়েছে। চলবে…

ইবাংলা/টিএইচকে/৩০ জুলাই,২০২২

Contact Us