মধ্যস্বত্বকারীদের থাবায় কুপোকাত রেমিট্যান্স যোদ্ধারা !

ইবাংলা প্রতিবেদন

রেমিট্যান্স যেটা প্রবাসীদের পাঠানো সেটাতে থাবা বসিয়েছে মধ্যস্বত্বকারীরা। প্রবাসী কর্মীদের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে অন্যত্র বিনিয়োগ করে মুনাফা নিচ্ছে কিছু এক্সচেঞ্জ হাউস।

আরও পড়ুন…ফিলিস্তিনে আবারও ভয়াবহ হামলা ইসরাইলের

এই কারনে সময়মত টাকা আসছে না দেশে ।অনেক প্রবাসী হুন্ডির দ্বারস্থ হচ্ছেন টাকা দেরিতে আসার জন্য। বৈদেশিক মুদ্রা থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে । এ ছাড়া্ও রেমিট্যান্সের অর্থ আটকে যাচ্ছে ভিসা ব্যবসার আড়ালে হুন্ডিবাজদের হাতে।সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশই চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতরে মুঠোয়।একটি চক্রের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানই অর্থ স্থানান্তর করছে অন্য খাতে।প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহের পর ব্যাংকে জমা দিচ্ছে না বিদেশে কিছু বৈধ ও অবৈধ এক্সচেঞ্জ হাউস ।এ অর্থ বিদেশে বিনিয়োগ করে মুনাফা নিচ্ছে তারা।একারনেই ওভার নাইট বা এক দিন, এক সপ্তাহ, এক মাস বা তিন মাসের জন্য বহুমুখী বিনিয়োগের সুবিধা আছে বিদেশের মানি মার্কেটে।প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে এক্সচেঞ্জ হাউজ ও হুন্ডিবাজরা ওইসব খাতে বিনিয়োগ করছেন।

আরও পড়ুন…বিএনপিকে হারিকেন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার আহব্বান

প্রায় ১৫০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স বিদেশে আটকে অছে এ খাতে । কেন্দ্রীয় ব্যাংক এগুলো দেশে আনার জন্য ব্যাংকগুলোকে তাগাদা দিচ্ছে।নিয়ম অনুযায়ী, ওই দেশের ব্যাংকে নষ্ট্রো অ্যাকাউন্টে (বাংলাদেশি ব্যাংকের হিসাবে) জমা করে রেমিট্যান্স এক্সচেঞ্জ হাউসে জমার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক পেয়ে যাবে এতে অর্থ জমা হলেই ।প্রবাসীর হিসাবে বাংলাদেশের ব্যাংক তা টাকায় স্থানান্তর করে। কিন্তু অনেকেই ফেঁসে যাচ্ছেন । এক্সেঞ্জ হাউসগুলো রেমিট্যান্সের অর্থ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে। বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর মতো ব্যাংকিং সুবিধা বিদেশের সব জায়গায় নেই।এ কারণে অনেক প্রবাসী বাধ্য হয়ে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠায়। এটা করতে গিয়ে । এই ধরনের প্রবণতা রোধে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো বিদেশে এক্সচেঞ্জ হাউস খুলতে থাকে।এছাড়া বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসের সঙ্গেও দেশের ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স পাঠানোর চুক্তি করে। এই সুযোগে গড়ে উঠে অনেক বেআইনি হাউস বৈধ এক্সচেঞ্জ হাউজের পাশাপাশি ।

আরও পড়ুন…তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চট্টগ্রাম নগরীতে বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা

অর্থমন্ত্রী গত বুধবার তার নিজের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, দেশে মোট রেমিট্যান্সের ৪১ শতাংশই আসছে হুন্ডিতে। গত অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার।এ হিসাবে হুন্ডিতে এসেছে ৮৬২ কোটি ডলার। মোট রেমিট্যান্স দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার। কিন্তু হুন্ডির ওই রেমিট্যান্স থেকে দেশ বঞ্চিত হয়েছে। ওইসব বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসেনি। ২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো বিদেশে বাংলাদেশের ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো পরিদর্শন করা হয়।

আরও পড়ুন…বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদে গায়কের সঙ্গে অভিনেতা সালমান খান

বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকটি পরিদর্শক দল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আবর আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে সরেজমিনে যান।সেখানে দেখেন, প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের অর্থ জমা দিলেও তা বাংলাদেশে আসছে ২ থেকে তিন মাস বা আরও পড়ে। ওইসব অর্থ ট্রানজিট হিসাবে অন্য খাতে বিনিয়োগের তথ্য পান।মাঝে সেই প্রবণতা কমলেও এখন আবার বেড়েছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও কয়েকটি বিদেশি ব্যাংকের শাখা পরিদর্শন করা হয়েছে। সেখানেও এ ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেছে।সে দেশের পুলিশ এমন বেশ কিছু এক্সচেঞ্জ হাউস বন্ধ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে।এরপরও সেগুলো আবার চালু হচ্ছে চোর-পুলিশ খেলায় ।মোট রেমিট্যান্সের ৯ শতাংশ আসে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ।সেখানে অভিযোগ উঠেছে সিলেট ইনভেস্টমেন্ট নামে একটি বেআইনি এক্সচেঞ্জ হাউস খুলে প্রবাসীদের মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ।এ প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনে যুক্তরাজ্য থেকেও রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মোট রেমিট্যান্সের ১২ শতাংশ ।

পর্তুগালেও রয়েছে এমন অনেক বেআইনি এক্সচেঞ্জ হাউস। তারা প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করলেও দেশে পাঠাচ্ছে না। এ নিয়ে গত কুরবানির ঈদের আগে প্রবাসীরা সেখানে বিক্ষোভ করলে বাংলাদেশ ব্যাংক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়। ফলে স্বাভাবিক হয়েছে ওই দেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ । মোট রেমিট্যান্সের ৫২ শতাংশ আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণ আমদানির সুযোগ দেওয়ায় ওইসব দেশে থেকে ব্যাপকভাবে স্বর্ণ আসছে বাংলাদেশে।

আরও পড়ুন…আম চাষে সমৃদ্ধি চীন

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে তুলনায় রেমিট্যান্স আসছে কম যত কর্মী কাজ করে । মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে ১৬ শতাংশ। ভিসা ব্যবসা বেশ জমজমাট মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায়। ভিসা সংগ্রহের পর সেগুলো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে দালালদের কাছে ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে। বাড়তি লাভের বিনিময়ে প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স নিয়ে দালালরা সেগুলো কিনছে।একটি ভিসা বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকায় ।পরে ওইসব ভিসা আরও বেশি দামে বিক্রি হয় দেশে । এভাবেও রেমিট্যান্স পাচার হচ্ছে মোটা অঙ্কের । মোট রেমিট্যান্সের যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৬ শতাংশ, কুয়েত থেকে ৮ শতাংশ, ওমান থেকে ৪ শতাংশ, মালয়েশিয়া থেকে ৫ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৯ শতাংশ, অন্যান্য দেশ থেকে ২৭ শতাংশ আসে।ওইসব সক্রিয় রয়েছে দেশেও হুন্ডি চক্র ।

আরও পড়ুন…একলাফে জ্বালানি তেলের দাম অনেক বাড়ল

বিশেষ করে বাংলাদেশি হুন্ডিবাজরা বেশি তৎপর মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে। যে কারণে মালয়েশিয়া থেকে এখন রেমিট্যান্স বেশি কমেছে।গত অর্থবছরে মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ৪২ শতাংশ। সিঙ্গাপুর থেকে কমেছে ৩২ শতাংশ। করোনার সময় হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসত। এখন রেমিট্যান্স কমেছে হুন্ডি সক্রিয় হওয়ায় ।

ইবাংলা/তরা/৬ আগষ্ট ২০২২

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us