দক্ষ জনশক্তিই উন্নত মানবসম্পদ

নিজস্ব প্রতিবেদন

বাংলাদেশ এখন প্রায় ১৮ কোটি লোকের বসবাস। বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশে বেকার সমস্যা সমাধান করে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে মানবসম্পদে পরিনত করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এর জন্য দরকার আরও সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা।

আমরা মৌলিক মানবিক চাহিদার পূরণ ও উন্নত জীবন ব্যবস্থা থেকে অনেকটা পিছিয়ে কারণ আমাদের আধুনিক প্রশিক্ষণ ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার অভাব। অন্যদিকে আমাদের পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই প্রত্যয় অব্যাহত রাখতে আমরা অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি।

আরও পড়ুন…বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের আশ্রয়দানকারী দেশসমুহের সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী

আধুনিক দক্ষ মানব সম্পদের জন্য প্রয়োজন কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা। যদিও বর্তমান বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু আশানুরূপ ফল এখনো আমরা পাইনি। কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার সমাপ্তির পর তাদের যথাযথ কাজের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশের শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলা জরুরি। অবশ্য বর্তমান বাংলাদেশ কয়েকটি ইকোনমিক জোন গড়ে উঠেছে। এই সমস্ত ইপিজেডে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।

সাধারণ কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রয়োজন উন্নত গবেষণা। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও উন্নত গবেষণায় আমরা যদি আরো অগ্রসর হতে পারি তাহলে আমাদের দেশে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই গবেষণা আজ অপ্রতুল। আধুনিক গবেষণাগার গড়ে তোলার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। গবেষণায় নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করে নতুন নতুন উদ্ভাবন সৃষ্টি করতে হবে। দেশের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি পাশ্চাত্য বিশ্বে গবেষণার জন্য শিক্ষার্থীদের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বিদেশে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশে এসে তাঁর বাস্তবায়ন করতে হবে।

আজকের উন্নত চীন- জাপান তাঁদের দেশের ছেলেমেয়েদের উন্নত শিক্ষার জন্য বাইরের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠায়। এ ছাড়া জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও তাদের শিক্ষার্থীদের বিদেশে পাঠিয়ে থাকে। সেই ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা অর্জন করে জ্ঞান আহরণ করে পরবর্তীকালে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে নিজ দেশের কাজে মনোযোগ দেন।

আজকের শক্তিশালী দেশ চীনের অনেক মেধাবী যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে থাকেন। সেই দেশের জ্ঞান আহরণ করে তাঁরা আজ নিজ দেশকে বিশ্বের মাঝে তুলে ধরেছেন। আজ জাপান রপ্তানিনির্ভর দেশে পরিণত হয়েছে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর একটি উন্নত আধুনিক বাংলাদেশ গঠন করার দীপ্ত শপথ নিয়ে আমরা অগ্রসর হয়েছিলাম। কিন্তু বিগত কয়েক শতক ধরে আমরা দেখছি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উন্নত প্রযুক্তির আর গবেষণার অভাব অন্যদিকে নোংড়া ছাত্র রাজনীতি। আজ দেখা যায়, নোংরা রাজনীতি, স্বজনপ্রীতি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় মেধাবীদের মূল্যায়ন করা হয় না। যাঁরা নিজস্ব অর্থায়নে বাইরের দেশে অধ্যয়ন করতে যান, তাঁদের দেশে নিয়ে আসার কোনো পরিকল্পনাও আমাদের আছে বলে জানা নেই। সুযোগ-সুবিধা না দেওয়ায় দেশ দক্ষ জনশক্তিগুলো হারাতে বসেছে।

আরও পড়ুন…বোমা হামলায় ৫ জেএমবির মৃত্যুদণ্ড

দেশের বিদ্যাপীঠগুলোর শিক্ষকেরা থাকবেন গবেষণা, শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে ব্যস্ত, সেখানে তাঁরা ব্যস্ত আছেন ছাত্র রাজনীতি নিয়ে, শিক্ষক নির্বাচন নিয়ে। এতে দেখা যায়, এ দেশের ছেলেমেয়েদের মেধা থাকা সত্ত্বেও তৈরি হচ্ছে না দক্ষ জনশক্তি। অথচ বাইরের দেশগুলো দক্ষ প্রজন্ম তৈরি করার জন্য অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে, আবার তাঁদের সে দেশের কাজে নিয়োজিত করছে।

আজ দেখা যায়, দেশে কোনো ভালো মানের গবেষক, সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ কিংবা বিজ্ঞানী দেশে সৃষ্টি হচ্ছে না। একটি দেশ যখন শিক্ষা–সংস্কৃতির দিক থেকে পিছিয়ে পড়ে, তখন কীভাবে দক্ষ জনশক্তি আশা করা যায়?

আমরা যদি দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে বিদেশে এই জনশক্তি রপ্তানি করতে পারি তাহলে আমাদের দেশ অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধি হবে। বিদেশে প্রবাসীদের অর্থে দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধি পাবে। দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য আজ সময় এসেছে দেশের জনগোষ্ঠীকে কে উন্নত আধুনিক ও কারিগরী শিক্ষায় শিক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তিতে পরিনত করা। তাহলেই দেশ আরো সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হবে।

ইবাংলা/জেএন/১৭ আগস্ট,২০২২

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us