এক, দুই, দশ বছর নয়। দীর্ঘ ৫১ বছর ধরে একটা ফুটবল নিজের সংগ্রহে রেখে দিয়েছেন সেবাস্তিও লুইস লরেন্সো! শুধু সংগ্রহে রেখে দেওয়াই নয়, ব্রাজিলের সাবেক এই গোলরক্ষক বলটির যে বিশেষ যত্নও করেন, প্রায়শই ওপরের ধুলোবালু পরিষ্কার করেন, বলটি দেখলেই সেটি স্পষ্ট। সময়ের চক্করে হাওয়া কমে বলটি অনেকটাই চুপসে গেছে বটে; তবে চর্মগোলকটির চর্মত্বকে বিশেষ যত্ন-আত্তির ছাপ স্পষ্ট।
এত বছর ধরে একটা বল সংগ্রহে রাখা এবং এমন যত্ন করার কারণ? বলটির সঙ্গে যে ‘ফুটবলের রাজা’ পেলের স্মৃতি জড়িত। ৫১ বছর আগে কিংবদন্তি পেলের যে পেনাল্টিটা ঠেকিয়েছিলেন সেবাস্তিও লুইস লরেন্সো, এটি সেই বল।
আরও পড়ুন…বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
অনেকেই অনেক কিছু সংগ্রহ করে রাখেন স্মৃতি হিসেবে। আর সেই স্মৃতি যদি কি কোনও কিংবদন্তির নামের সঙ্গে যুক্ত থাকে তাহলে তো কোনও কথাই নেই।
কেউ কোনও কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদের অটোগ্রাফ সংগ্রহ রেখে দেন। কেউ রেখে দেন জার্সি। কেউ ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস। আমরা এমন একটা ঘটনার কথা বলবও যার স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন ফুটবল সম্রাট পেলে।
গত ২৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন কিংবদন্তি পেলে। ফুটবলের রাজার মৃত্যুত েসেবাস্তিও লুইস লরেন্সোর সেই পেনাল্টি ঠেকানো এবং বল সংগ্রহে রাখার ঘটনাটি সামনে চলে এসেছে। পেনাল্টি ঠেকানো সব সময়ই গোলরক্ষকদের কাছে বিশেষ তৃপ্তির। ম্যাচ এবং খেলোয়াড়ের গুরুত্ব বিচারে সেই তৃপ্তির মাত্রাটা আরো উঁচু হয়।
কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালেই যেমন ফ্রান্সের একটা শট ঠেকিয়ে নায়ক বনে গেছেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। দেশকে উপহার দিয়েছেন বিশ্বকাপ। আর সেবাস্তিও লুইস লরেন্সো তো ঠেকিয়েছিলেন ‘রাজা’ পেলের পেনাল্টি।
আরও পড়ুন…আগারগাঁওয়ে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
পেলে তখন সত্যিকার অর্থেই ফুটবলের রাজা। ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে তখন তিনটি বিশ্বকাপ জয় হয়ে গেছে পেলের। ১৯৭০ সালে ব্রাজিলের তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের পর দ্বিধাহীনভাবেই পেলেকে ‘রাজা’ উপাধি দেওয়া হয়। সারা দুনিয়াই তখন ‘ব্রাজিলিয়ানদের কালো মানিকের’ বন্দনায়। পেলেকে নিয়ে ব্রাজিলিয়ানদের উন্মাদনাটা তো ছিল আরো বেশি।
সেই গনগনে সময়েই ব্রাজিলের ঘরোয়া একটা ফুটবল ম্যাচে পেলের ক্লাব সান্তোসের মুখোমুখি হয় লুইস লরেন্সোর ক্লাব সাও বেন্তো। মুখোমুখি হন পেলে-সেবাস্তিও লুইস লরেন্সো। ১৯৭১ সালের ১২ মে, পৌলিস্তা চ্যাম্পিয়নশিপের সেই ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত পেলের সান্তোসই জেতে। কিংবদন্তি পেলেও জাদুকরি পারফর্ম করেছিলেন। কিন্তু তার আগে পেলের একটা পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে নায়ক বনে যান সেবাস্তিও লুইস লরেন্সো।
মহানায়ক পেলের পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে তিনি এতটাই রোমাঞ্চিত ছিলেন যে, স্মৃতির স্মারক হিসেবে সংগ্রহে রাখার জন্য সেই বল তিনি নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। ৫১ বছর ধরে তা নিজের সংগ্রহেই রেখেছেন। জানা গেছে, পেলের পেনাল্টি ঠেকানো গোলরক্ষকদের মধ্যে একমাত্র তিনিই এখনো বেঁচে আছেন।
আরও পড়ুন…ফানুস অপসারণের পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক
লুইস লরেন্সো বয়সে কিংবদন্তি পেলের এক বছরের ছোট। তবে পেলের মতো তিনিও ১৫ বছর বয়সে ফুটবল খেলা শুরু করেন। ব্রাজিলের জুলদিয়ার শহরে জন্ম নেওয়া ৮১ বছর বয়সি সেবাস্তিও লুইস লরেন্সো কখনো ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারেননি। তবে তা নিয়ে তার তেমন আফসোস নেই। বরং পেলের স্মৃতি নিয়েই খুশি তিনি।
সেই ঘটনার স্মৃতিচারণা করে লুইস লরেন্সো বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য যে, পেলের মতো এক কিংবদন্তির পেনাল্টি ঠেকিয়েছিলাম।’ পেলে সম্পর্কে তার মূল্যায়ন, ‘পেলে আমার কাছে সবকিছু। সেরা ফরোয়ার্ড। তাকে আপনি এক মুহূর্তও ভুলে থাকতে পারবেন না। আপনি যখনই তাকে গোলবঞ্চিত রাখতে চাইবেন, তখন সে নিজেই গোল আবিষ্কার করে নেয়। সে অন্য খেলোয়াড়দের চেয়ে ভিন্ন।’
ইবাংলা/জেএন/১ জানুয়ারি, ২০২৩
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.