নিজের দেশটাকে দু’চোখ ভরে দেখার প্রবল আগ্রহই একত্রিত করেছিল তাদের। স্বপ্নবাজ ভ্রমণপিপাসু দুজন নারীর উদ্যোগেই গড়ে উঠেছিল দেশের প্রথম নারী ভ্রমণ দল ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করা এই সংগঠনটিতে ইতোমধ্যে যুক্ত হয়েছেন ৫৫ হাজারের মতো নারী ভ্রমণকারী।
গৃহিণী, ছাত্রী, শিক্ষিকা থেকে শুরু করে সব পেশার নারীরা যুক্ত হয়েছেন এ দলে। ভ্রমণের নেশায় ঘুরে বেড়ানো এ ভ্রমণকন্যারা কখনো ছুটে যান সমুদ্রে পা ভেজাতে। কখনো ছুটে চলেন পাহাড়ের বুক চিরে ঝরনার স্রোতধারার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা আর নিজের দেশের মায়াময় রূপ দেখতে পাহাড়, পর্বত, সমুদ্র, বনসহ বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলেও পড়েছে তাদের পায়ের ছাপ। না, ঠিক বলা হয়নি! শুধু ঘুরে বেড়ানোই নয়, সামাজিক বিভিন্ন কাজের সঙ্গেও নিজেদের যুক্ত করেছেন এ নারী অভিযাত্রীরা।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তাদের পথচলার গল্প। নারী ভ্রমণকারীদের এই দলটির নাম ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা দুই ডাক্তার সাকিয়া হক ও মানসী সাহা ২০১৬ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে গড়ে তোলেন এই ভ্রমণ গ্রুপ।
ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ দলটি গড়ে ওঠার গল্প বলতে গিয়ে এর প্রতিষ্ঠাতা ডা. সাকিয়া হক বলেন- বরাবরই বাইরে ঘুরে বেড়ানোর শখ ছিল। কিন্তু কোথাও ঘুরতে বের হতে চাইলেই নানান সমস্যার মধ্যে পড়তাম। বাসা থেকে অনুমতি মিলত না। এর থেকে মুক্তি পেতে এক দিন ভাবলাম আমরা কয়েক মেয়ে নিয়ে দলবেঁধে কেন ঘুরতে বের হই না? সেই চিন্তা থেকেই আজকের ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ। ফেসবুকে একটা পোস্ট দেওয়ার পর দেখলাম শুধু আমি নই, ভ্রমণপিয়াসী এমন অনেকেই সাড়া দিলেন। ব্যস, ফেসবুকেই গড়ে উঠল গ্রুপ ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ।
এরই মধ্যে ১০০টি দলগত ভ্রমণ সম্পন্ন করেছে সংগঠনটি। ঘুরেছেন দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতে। যাতে অংশগ্রহণ করা ভ্রমণকারীর সংখ্যা প্রায় ১২ শতাধিক। সাধারণত ছুটির দিনগুলোতে দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দলবেঁধে বের হন সদস্যরা।
ভ্রমণ করতে গিয়ে কোনো সমস্যায় পড়ার অভিজ্ঞতা আছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনটির আরেক প্রতিষ্ঠাতা ডা. মানসী সাহা বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। এ ছাড়াও আমাদের প্রতিটি ট্যুরে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে রাখি। এতে করে আমাদের জন্য অনেক কিছুই সহজ হয়ে যায়।
শুধু ভ্রমণেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না ভ্রমণকন্যারা। দেশের সৌন্দর্য তুলে ধরতে গত বছর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে তিন দিনব্যাপী ফটো এক্সিবিশনের আয়োজন করে সংগঠনটি। লেখালেখিতে নারীদের আগ্রহী করে তুলতে ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ‘ভ্রমণকন্যা’ নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়। এখানে গ্রুপের সদস্যরা তাদেরভ্রমণ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
প্রতিবছর এমন কার্যক্রম পরিচালনা করে যেতে চান বলে জানান গ্রুপের সদস্যরা। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০ থেকে ২৪ নভেম্বর শিল্পকলায় আয়োজিত হতে যাচ্ছে ট্রাভেল অ্যান্ড ট্রাভেলেটস এক্সিবিউশন সিজন-২। এ ছাড়াও বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবাসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদান এবং নানান সামাজিক কাজে অংশ নিয়েছেন তারা।
ভ্রমণকন্যারা ঘুরে বেড়ানোর এক পর্যায়ে ভাবলেন এই সময়ে কিছু সামাজিক কাজও করবেন তারা। সামাজিক দায়বদ্ধতার এই জায়গা থেকে গত বছরই শুরু হয় গ্রুপের আরো এক কার্যক্রম নারীর চোখে বাংলাদেশ। এ কার্যক্রমের রয়েছে একটি বিশেষ দিক। এ কার্যক্রমে দুটি স্কুটি তাদের সঙ্গী।
স্কুটিতে চড়ে চার নারী ঘুরে বেড়ান দেশের বিভিন্ন জেলায়। আর এ ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্যই হলো জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়ন, আত্মরক্ষা, খাদ্য-পুষ্টি, বাল্যবিয়ে ও বয়োসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা।
স্কুটি নিয়ে ঢাকার রাস্তায় নারীদের ছুটে চলা বর্তমান সময়ের পরিচিত দৃশ্য হলেও এখনো অনেক কটূক্তি সহ্য করতে হয়। সেখানে দেশের প্রতিটি জেলায় স্কুটি নিয়ে বেড়ানো যতটা না সক্ষমতার, তার চেয়ে বেশি সাহসের। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে ইতোমধ্যে চারটি পর্বে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর অঞ্চলের টি জেলায় স্কুটি চেপে ঘুরে বেড়িয়েছে দলটি।
ইবাংলা /টিপি/ ৭ ডিসেম্বর ২০২১