নিয়োগ পরীক্ষার সবকটি ধাপ পার হওয়ার পরও স্থায়ী ঠিকানা জটিলতায় চাকরি না হওয়া আছপিয়ার পাশে এস দাড়িয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। আছপিয়ার চাকরি না হলে অনশনে বসার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। চাকরি না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে করা একটি প্রতিবাদী পোস্টে মন্তব্য করে তিনি এই ঘোষণা দেন।
নির্মলেন্দু গুণ তার পোষ্টে লেখান ‘ভূমিহীন হলে পুলিশের চাকরি করা যাবে না—এ রকম একটা আইন আছে, সেটাই তো জানতাম না। মেধা তালিকায় পঞ্চম হয়েও ভূমিহীন বলে বরিশালের আছপিয়া চাকরি পাবে না, এটা হতে পারে না। হতে দেওয়া যায় না। এই আইন বাতিল কিংবা সংশোধন করে তাকে চাকরি দেওয়া হোক। নইলে আমি অনশনে বসব।’
এদিকে নির্মলেন্দু গুণের অনশনে বসার ঘোষণাকে অনেকে সমর্থন জানিয়েছেন। এমনকি তার সঙ্গে অনশনে বসার আগ্রহও দেখিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দফতর। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল জেলা থেকে টিআরসি পদে ৭ জন নারী ও ৪১ জন পুরুষ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হিজলা থেকে অনলাইনে আবেদন করেন আছপিয়া ইসলাম। ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।
২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও কৃতকার্য হন। ২৪ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আছপিয়া। তবে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে নিয়োগ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। কারণ তিনি বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। এই নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
আছপিয়ার পরিবারের তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী হিজলা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্বাস জানান, আমি তদন্তে পেয়েছি আবেদনকারী বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। সেটি উল্লেখ করেছি। বাকি বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
আছপিয়া ইসলাম কাজল বলেন, যেকোনো বিবেচনায় হোক আমাকে চাকরিটি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই। এতে আমার সংসারের দুঃখ মোচন করতে পারব। আমার মায়ের দুঃখ ঘোচাতে পারব। আমরা হিজলায় ভূমিহীন হলেও সব পরীক্ষায় আমি পাস করেছি। যদি যোগ্য হই তাহলে আমাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাই।
পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান বলেন, আমার কাছে অনেকেই বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আমার কিছু করার সুযোগ নেই। কারণ তার পুলিশ ভেরিফিকেশন চলছে। এটা গোপনীয় প্রক্রিয়া। আমি তাকে ভেরিফিকেশন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছি। পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি। পুলিশ সুপারকে তার বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখতে বলেছি। বরিশালের সিডিকে বিষয়টি জানিয়েছি।
আছপিয়ার বিষয়টি পুলিশে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাজে দেবে বলে মনে করি। বরিশালের পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, যেহেতু আছপিয়া সাতটি স্তর পাস করেছে। আমরা তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
ইবাংলা /টিপি/ ১০ডিসেম্বর ২০২১