স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পদত্যাগ দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিরোধীদল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। করোনা পরিস্থিতে তার বিভিন্ন কার্যক্রমের সমালোচনা করে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী দিনে এই দাবি করেন তিনি।

এছাড়া বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বিভিন্ন সংসদ সদস্যও সমালোচনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর। শনিবার (৩ জুলাই) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী দিনে এ দাবি করা হয়।

স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের অধিবেশনের শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিরোধীদল ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা সমালোচনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের।

সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা জি এম কাদের বলেন, ‘প্রায় ক্ষেত্রেই সহযোগিতা পাওয়া যায় না। টেলিফোন করলে ধরেন না। আমি মাননীয় মন্ত্রীকে ৬-৭ বার টেলিফোন করেছি। উনি কোনদিন টেলিফোন ধরেননি। কল ব্যাকও করেননি। পত্র দিলে কোন উত্তর বা সমাধান মেলে না।’

বিএনপির বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য জি এম সিরাজ বলেন, ‘আইসিইউ বেড আছে ৮টি, কিন্তু এখানে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা আছে মাত্র ২টি। যার ফলে আইসিইউ ৮টি বেড কোন কাজে লাগছে না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

জিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একই অবস্থা। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সংকট। একইসাথে বেসরকারি টিএমএসএস সহ তিনটি হাসপাতালে তীব্র অক্সিজেন সংকট বলেও স্পিকার কাছে জানান।’

সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, ‘আজকে পর্যন্ত দেখলাম না আমাদের মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটি হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে রোগীদের অবস্থা দেখেছেন।

উনি ঘরের ভেতর বসে থেকে জুম মিটিং করেন। মাননীয় স্পিকার, আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী উনি যে কি মানুষ বুঝলাম না। উনার লজ্জা-শরম কিছু নাই, নৈতিকতা নাই। উনার রিজাইন দেয়া উচিত। উনার পদত্যাগ দাবি করছি।’

বিএনপির আরেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের দাবি, সংসদে এর আগে স্বাস্থ্যযমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের অপমান করে বক্তব্য দিয়েছেন। সেই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘উনি বলছেন হাসপাতালের মেশিন চলে না, লোক লাগবে। এগুলো তো আপনাদের দেখতে হবে। কিন্তু আপনারা তো সেটি দেখেন না। মাননীয় স্পিকার এটা সাংঘাতিকভাবে অপমানজনক।

উনি হাউজকে অপমান করেছেন, এটা এক্সপাঞ্জ হওয়া দরকার। গোটা হাউজে তো ৯০ ভাগের বেশি সরকারি দলেরই এমপি। তারা কি কেউ দায়িত্ব পালন করেন না সরকারি হাসপাতালে? এটা কিন্তু উনার বক্তব্যে স্পষ্ট মাননীয় স্পিকার।’

এছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও রুস্তম আলী ফরাজী।

ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ জানান, ‘আইসিইউ ও এইচডিইউ এখানে যাওয়ার পরে যে কি চিকিৎসা হয় এটার কেউ খবর রাখে না। এখানে অধিকাংশ রোগী অক্সিজের অভাবে মারা যাচ্ছে।

পরে বলে রোগীর অবস্থা খারাপ, আমরা ভেন্টিলেটরে দিয়ে দিচ্ছি। আপনি রোগী নিয়ে যান, মারা গেছে। ১ ঘণ্টা পরে বলে। এভাবে কি মানুষ মারা যাবে? মানুষের কি জীবনের কোন দাম নাই মাননীয় স্পিকার?’

পিরোজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য রুস্তুম আলী ফরাজী জানান, ‘আমি মাননীয় মন্ত্রীকে সরাসরি বলিনি। আমি বলেছি, ৪ টাকার সার্জিক্যাল মাস্ক কেন ৩৫৬ টাকায় কেনা হলো? এটা তদন্ত করবেন, দেখবেন, ব্যবস্থা নেবেন। এটা হলো মন্ত্রীর দায়িত্ব।

কিন্তু উনি এটা এড়িয়ে বললো যে, এটা সত্য না। আজকে আমি তথ্য প্রমাণ নিয়ে এখানে এসেছি।’ তবে যাকে ঘিরে এত আলোচনা সমালোচনা, সেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন না।

ইই/ জাতীয়/ ৩ জুলাই, ২০২১

Contact Us