জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চাইলেও তাৎক্ষণিক এগিয়ে আসেনি পুলিশ। এমনই অভিযোগ এনেছেন কক্সবাজারে ঘুরতে যাওয়া দলবেঁধে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী। পরে ঘটনাটি র্যাবকে জানান তিনি।বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের হোটেলে এ ঘটনা ঘটে।
র্যাব জানায়, বুধবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে এসে শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে ওঠেন। পরে বিকেলে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে যান। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগে। এ সময় এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে ভুক্তভোগী নারীর ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে অটোরিকশা করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। পরে অন্য আরেকটি অটোরিকশায় তাকে তুলে নেয় ৩ যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করে তারা।
এর পর ভুক্তভোগীকে জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে নিয়ে আরেক দফা ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে রুম বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ধর্ষকরা। পরে ভুক্তভোগী গৃহবধূ জাতীয় জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯-এ কল করেন। পুলিশ তাকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়। পরে র্যাব এসে তাকে উদ্ধার করে। তার স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করা হয় পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, ‘৯৯৯-এ ফোন করার পর আমাকে ফোন দেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তা। তার নাম-পরিচয় না বললেও পুরো বিষয়টি আমি তাকে বলি। কিন্তু তিনি আমার কাছে না এসে উল্টো থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেন। ‘একপর্যায়ে আমি হোটেলে-মোটেল জোনে বসানো সাইনবোর্ড থেকে র্যাবের নম্বর পাই। যোগাযোগ করা হলে তারা দ্রুত এগিয়ে আসে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে? যেখানে জরুরি সেবার জন্য ফোন দিলে তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ার কথা ছিল। সেটা আমি পাইনি।’
এদিকে ফোন পাওয়ার পর র্যাব ভুক্তভোগী নারীর স্বামী-সন্তানকে পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে উদ্ধার করে। পরে হোটেলের ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুজনকে শনাক্ত করার কথা জানায় র্যাব।র্যাবের ভাষ্য, ওই দুই যুবক হলেন কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম ও আব্দুল জব্বার জয়া। আরেকজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
ওই এ ঘটনার পর জিয়া গেস্ট ইনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে র্যাব। এতে দেখা যায় তিন যুবক অটোরিকশায় এক নারীকে নিয়ে আসেন। দুজন ওই নারীর সঙ্গে থাকেন। আরেকজন হোটেলের রুম বুকিং দেন। সে সময় রিসিপশনে হোটেলের ব্যবস্থাপক ছোটন ছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে যুবকরা বেরিয়ে গেলেও ওই নারীকে নামতে দেখা যায়নি।র্যাব জানায়, এই ফুটেজ থেকে দুজনকে শনাক্তের পর ওই নারীকে তাদের ছবি দেখানো হয়। তিনি তাদের চিনতে পেরেছেন।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তা জানান, গত বছর আশিকের নেতৃত্বে কয়েকজন এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। এই মামলায় তিনি জেলে ছিলেন। প্রায় ৪ মাস আগে জেল থেকে বের হওয়ার পর তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেখা যায়। আশিক এলাকায় মাদক ও যৌনকর্মী সরবরাহের কাজ করে। জয়া তার অন্যতম সহযোগী।তিনি আরও জানান, ভুক্তভোগী নারীকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
এ অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীরুল গিয়াস সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এই তথ্যটি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিচ্ছি।কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, ৯৯৯-এ সার্বক্ষণিক মোবাইল টিম মাঠে থাকে। এমন তো হওয়ার কথা নয়। যদি কেউ দায়িত্বে অবহেলা করে। তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম সরকার বলেন, এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। ভুক্তভুগী ওই নারী মামলা করবেন। মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
ইবাংলা /সুপ্তা/ নাঈম/ ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১