চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে। কাটা পাহাড়ের রাস্তায়, আবাসিক হলের কক্ষে, অনুষদ ভবনে কিংবা গবেষণা কেন্দ্রে হরহামেশাই দেখা মিলছে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা দুইটার দিকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের গবেষণা কেন্দ্রে ১২ ফুট লম্বা একটি অজগর সাপ ঢুকে পড়ে।
পরে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী সাপটিকে উদ্ধার করে জঙ্গলে ছেড়ে দেন। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষকেরা বলছেন, ক্রমাগত গাছ কাটা, সাপের বাসস্থান নষ্ট করা ও খাবারের খোঁজে সাপ লোকালয়ে চলে আসছে। বেশির ভাগ প্রজাতির সাপই নির্বিষ।
অজগরটিকে জীববিজ্ঞান অনুষদের পেছনের পাহাড়ের জঙ্গলে ছেড়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষণার্থী গবেষক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটি বার্মিজ পাইথন নামে পরিচিত। ওজনে ১৮ কেজির মতো।
শুধু এটিই নয়, গত তিন মাসে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা থেকে ১৫টি সাপ উদ্ধার করে জঙ্গলে ছেড়েছেন রফিকুল। এর আগে গত ৭ নভেম্বর আলাওল হলের ১১০ নম্বর কক্ষ থেকে একটি ‘কমন উল্ফ’ বা ঘরঘিন্নি সাপ উদ্ধার করা হয়। আর ২১ অক্টোবর দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের একটি কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় শঙ্খিনী সাপ।
জানতে চাইলে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. ফরিদ আহসান বলেন, পাহাড়ে আগুন দেওয়া ও গাছ কাটার ফলে সাপের আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া বেশ কিছুদিন ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল। বাধা ছাড়াই সাপ ঘুরে বেড়িয়েছে। এটি এখনো অব্যাহত রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত তিন বছরে অন্তত ৩২ বার আগুনে পুড়েছে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পাহাড়। এতে বড়-ছোট গাছপালা, পাহাড়ি কীটপতঙ্গ, জঙ্গল পুড়ে ছাই হয়েছে। একটি ঘটনারও তদন্ত হয়নি। অগ্নিকাণ্ড রোধে কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি কর্তৃপক্ষ। কারা পাহাড়ে আগুন লাগাচ্ছে, তা বের করতে পারছে না। এমনকি কী পরিমাণ গাছপালা পুড়েছে, তা–ও জানার আগ্রহ নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে পাহাড়ঘেরা সবুজ শ্যামল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
অবশ্য পাহাড়ে আগুনের ঘটনা একেবারেই নতুন নয়। প্রায় প্রতিবছরই আগুনে পুড়ে সবুজ পাহাড় বিবর্ণ হয়েছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এখন আগের চেয়ে বেড়ে গেছে।
ইবাংলা / নাঈম/ ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১