একটি আধুনিক ও প্রযুক্তি জ্ঞানভিত্তিক জাতি হিসেবে দেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে রূপান্তর করাই আমাদের লক্ষ্য বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১৬ জানুয়ারি) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নবনির্মিত ‘রংপুর বিভাগীয় সদর দফতর কমপ্লেক্স ভবন’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের দেওয়া নির্বাচনী ইশতেহারের কথা উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সকল উন্নয়ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। তিনি বলেন, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। ২০১০ থেকে ২০২০ পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি অর্জন করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। সেজন্য ২০২১ থেকে ২০৪১ পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি; সেটাও বাস্তবায়ন হবে ইনশাল্লাহ। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আর কেউ ভবিষ্যতে থামাতে পারবে না।
সরকার স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন জাতি গঠন করে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে চাই, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। মানুষ অনেক সচ্ছল হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু আমরা চাই আমাদের আরো অনেক দূর যেতে হবে।
তিনি বলেন, এ দেশে আর কখনো যেন মঙ্গা বা দুর্ভিক্ষ দেখা না দেয়। এ দেশের মানুষ যেন আর কোনো কষ্ট না পায়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল ওয়াহাব ভূঞা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। নবনির্মিত রংপুর বিভাগীয় কমপ্লেক্সের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে আসার উদ্যোগ সরকার নিয়েছে। সেখান থেকে ৩০ পদের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বই দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটি গ্রামকে তার সরকার আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন করে গড়ে তুলবে, যাতে গ্রামের মানুষ গ্রামে বসবাস করলেও সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পেতে পারে। মানুষকে আর কোথাও ছুটোছুটি করতে হবে না। গ্রামেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। সেজন্য ‘আমার গ্রাম আমার শহর কর্মসূচি’ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার।তিনি এসব উন্নয়ন কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে সবারকে সহযোগিতার অনুরোধ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার রংপুর এবং আশপাশের জেলার সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নত করছে এবং যমুনার ওপর পৃথক রেলসেতু নির্মাণ করছে। আমরা দ্রুত রেলের ব্যবস্থা করছি, চার লেনের ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক ৬ লেনের করা হয়েছে। প্রত্যেকটি বিভাগীয় সড়ককে আমরা চার লেনের করে দিচ্ছি আর হাইওয়ে ৬ লেনের করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, রংপুরসহ সব বিভাগে ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া সরকারি সবগুলো দফতর যেন এক জায়গা থেকে মানুষকে সেবা দিতে পারে, সেজন্য আজকে রংপুরে অত্যাধুনিক বিভাগীয় কমপ্লেক্স করে দেওয়া হল।
আওয়ামী লীগ সরকারে এসে রংপুর অঞ্চলের মঙ্গা দূর করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে আমরা রংপুর বিভাগ করে দেই। এখন উদ্বৃত্ত খাদ্যের অঞ্চল হয়ে গেছে এই রংপুর। এক সময় খাবারের অভাবে মানুষ মারা গেছে। মানুষ দেখলে মনে হতো জীবন্ত কঙ্কাল হেঁটে বেড়াচ্ছে। এ অবস্থা আমার নিজের চোখে দেখা। আল্লাহর রহমতে এখন আর সেই অবস্থা নেই।
দেশের সব গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়ার সরকারের বাস্তবায়নাধীন কর্মসূচির প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, রংপুরে ভূমিহীন বেশি ছিল। আমরা তাদের জমিসহ ঘর দিয়েছি। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, সারাদেশের কোথাও যেন ভূমিহীন না থাকে। প্রয়োজনে আমরা জমি কিনে ঘর করে দেবো।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, ড. ওয়াজেদ সাহেব ছিলেন পরমাণু বিজ্ঞানী। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন তিনি। আজ আমরা সেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছি। ২০২৪ সালের মধ্যে আশা করি, সেখান থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবো। এ থেকে উত্তরবঙ্গই সবচেয়ে লাভবান হবে। আমরা চাই, দেশটা আরো উন্নত হবে, এগিয়ে যাবে।
রংপুর অঞ্চলের শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলে শিক্ষার হার কম ছিল, কিন্তু এখানে মেধাবী ছাত্র ছিল। কাজেই আমরা সেদিকে হিসাব করে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। কুড়িগ্রামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি, লালমনিরহাটে অ্যাভিয়েশন এবং অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি এবং রংপুরে বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান পায়রাবন্দে একটা কমপ্লেক্স এবং ট্রেনিং সেন্টার করা হয়েছে। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় বেগম রোকেয়ার নামে করে দিয়েছি। কেননা তিনিই প্রথম শিক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলেই আমরা কিছু লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছি।
রংপুর বিভাগীয় সদর দফতর কমপ্লেক্স ভবনটি খুবই চমৎকারভাবে তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক চিন্তাভাবনা নিয়ে আলো বাতাসের ব্যবস্থা রেখে ১০ তলা ভবন করা হয়েছে। সময়ের আগে কাজ শেষ হয়েছে, টাকাও সাশ্রয় হয়েছে। সব জায়গায় প্রজেক্ট দিলে টাকা সাশ্রয় হয় না, বরং পরে আবার চায়। সে জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে যারা এমন কমপ্লেক্স করবে, তারাও যেন বিষয়টি মাথায় রাখেন।
ইবাংলা / নাঈম/ ১৬ জানুয়ারি, ২০২২