আয়োজন ছিল না গায়েহলুদের। লাগেনি হাতে মেহেদি। ছিল না বিয়ের শাড়ি ও গয়না এমনকি কোনো আনন্দ। ছিল উৎকণ্ঠা। ২৭ বছর আগে এভাবেই বিয়ের আসরে বসেছিলেন নাট্যকার বৃন্দাবন দাস ও অভিনয়শিল্পী শাহনাজ খুশি দম্পতি। জীবনের নানান চড়াই–উতরাইয়ের মধ্যে একটা না পাওয়া এখনো কাঁদায় শাহনাজ খুশিকে।
চলতি পথে অনেক না পাওয়া আছে। সেগুলো নিয়ে কোনো আফসোস, মান–অভিমান নেই। সুখ–দুঃখের ২৭ বছর কাটালেন, পেছনে তাকালে কী মনে হয়? এমন প্রশ্নে শাহনাজ খুশি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করেছি। সেই সময় কে পাশে ছিলেন, কে ছিলেন না, এসব আর ভাবি না। অনেক পাওয়ার মধ্যে শুধুই একটিই আফসোস আমাকে কষ্ট দেয়। মান–অভিমানে, ভুলে, এক দিন–দুই দিন করে ২১ বছর বাবাকে দেখতে পারিনি। পরে বাবা হঠাৎ স্টোক আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দীর্ঘদিন বাবার সঙ্গে কথা হয়নি।’
জার্মান কালচারাল সেন্টারে সেদিন একটি নাটকের শো ছিল। সেই দিনকেই তাঁরা বিয়ের জন্য বেছে নেন। যেন অনিশ্চিত পথে পা বাড়ান। বিয়েতে হলুদ, মেহেদি, কোনো আয়োজন—কিছুই নেই। এসব তাঁরা এখন আর ভাবেন না। শাহনাজ খুশির ভাবনায় বারবার ফিরে আসে তাঁর বাবার কথা। তিনি বলতে থাকেন, ‘বাবা আমাকে সবচেয়ে বেশি আদর করতেন। বিয়ের পর অভিমান করেছিলেন। সে সময় আমরা (বৃন্দাবন দাস) একা হয়ে গিয়েছিলাম।
কিন্তু আমি জানতাম, বাবা সব সময় আমাদের খোঁজখবর নিতেন। দূর থেকে ভালোবাসতেন। কিন্তু বাবার কাছে যাওয়া হতো না। পাবনা থেকে চলে আসার পর বাবার সঙ্গে আর দেখা হয়নি। বাবার সঙ্গে দেখা না হওয়ার শূন্যতা আমাকে ক্লান্ত করে দেয়। জীবনে আমার আর কোনো অপ্রাপ্তি নেই।’
‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’, অথচ সেই রমণীই বললেন তাঁর স্বামীর সততা, অক্লান্ত পরিশ্রম আর দুজনের ভালোবাসায় সংসার জীবনে এতটা পথ এসেছেন। বাকি পথ সন্তানদের আগলে রেখে পাড়ি দেওয়ার আশা রাখেন। খুশি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে সব সময় যে ভালোবাসা ছিল, সেটা এখনো আগের মতোই রয়েছে। আমরা রোজ একই ওষুধের পাতা থেকে অ্যাসিডের ট্যাবলেট খাই। সুস্থ থাকার চিন্তায় খুব ভোরে হাঁটতে যাই। আগের মতো ব্যস্ততা না থাকায় সকালে চা খাওয়ার পর, অনেকক্ষণ কথা হয়।
জীবনটা নিয়ে হাসতে পারি। একদিন হয়তো পরিস্থিতির কারণে মুখে হাসি ছিল না। কিন্তু সেটাও জীবনের জন্য দরকার। মসৃণ জীবনকে আমার জীবন বলে মনে হয় না।’ বৃন্দাবন দাস বর্তমানে নাটক লেখা নিয়ে ব্যস্ত। অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শাহনাজ খুশি। তাঁরা শুরু করতে যাচ্ছেন ঈদের একাধিক কাজ।
ইবাংলা /টিআর / ১৯ জানুয়ারি