করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়। পর্যটকদের আনাগোনা কমে আসছে। হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম রুম বুকিং হচ্ছে। আবার অনেকে রুম বুকিং দিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বুকিং বাতিল করছে। ভীড় নেই সমুদ্র সৈকত, রেস্টুরেন্ট ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের দোকানসহ স্পটগুলোতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন ওমিক্রনের কারনে মানুষ আতংকিত। অনেকটা ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি ও যেকোন মূহুর্তে লকডাউনের ঘোষণা আসতে পারে এমন আতংকে পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে।
পর্যটন মৌসুমে স্বাভাবিকভাবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়াও সবসময় মিনিমাম ৫০% রুম বুকিং থাকে। কিন্তু নতুন করে করোনা সংক্রমণ দিনদিন বেড়ে যাওয়ায় কারনে যা ২০% এ চলে এসেছে। আবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ৭০-৮০% রুম বুকিং থাকে। সেক্ষেত্রেও ৪০% রুম বুকিং হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে, নতুন করে পর্যটন ব্যবসায় শংকা দেখা দিয়েছে।
আমিন ইন্টারন্যাশনাল এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুহাম্মদ আমিন জানিয়েছেন, তার হোটেলে মোট ৩৫ টি রুম রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ১০ টি রুমে গেস্ট রয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার উপলক্ষে বেশ কয়েকটি রুম বুকিং ছিলো। কিন্তু করোনায় আক্রান্তের অজুহাতে বেশিরভাগ রুমের বুকিং বাতিল করেছে। ভরা মৌসুম হলেও ৫০% ছাড় দিয়ে রুম বুকিং দেওয়া হচ্ছে। তাতেও ৫০% রুম বুকিং হচ্ছে না।
যেকোন মূহুর্তে লকডাউনের ঘোষণা আসতে পারে এমন আতংকে পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে। হোটেল দ্যা গ্র্যাণ্ড স্যান্ডির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান জানিয়েছেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন উপলক্ষে ২০০ জনের একটি গ্রুপের দু’দিনের বুকিং ছিলো। হঠাৎ করে তারা বুকিং বাতিল করেছেন। শুক্র ও শনিবার ছাড়া বাকি দিনগুলোর বেশিরভাগ সময় কোন বুকিং থাকে না।
তিনি আরো জানান, সরকার আবার কখন লকডাউন দেয় তা নিয়ে সাধারণ মানুষ আতংকে আছে। এর কারনেও অনেকে আসার সাহস করছে না। একই অবস্থা নামি-দামি খাবারের হোটেল রেস্তোরাঁয়ও। বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের আইটেম রেডি করলেও ভোজনরসিক পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় অনেক খাবার নষ্ট হচ্ছে। এমনকি নতুন করে লকডাউনের ঘোষণা আসলে বড় ধরনের লোকসান আতংক কাজ করছে তাদের মাঝে।
ভরা মৌসুম হলেও ৫০% ছাড় দিয়ে রুম বুকিং দেওয়া হচ্ছে। তাতেও ৫০% রুম বুকিং হচ্ছে না।
কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁর চেয়ারম্যান, আশরাফুল ইসলাম রাকিব জানিয়েছেন, মাত্র ২১ দিন আগে তার প্রতিষ্ঠান কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁর একটি শাখা খুলেছেন। কোটি টাকা ইনভেস্ট করে এখন শংকায় দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে পর্যটক নির্ভর হওয়ায় করোনা আতংকের পর থেকে বেচাকেনা কমে গেছে। তবে, শুক্রবার হিসেবে মোটামুটি ভীড় ছিলো।
হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানিয়েছেন, শুধু করোনার কারনে নয় বিভিন্ন কারনে পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে। করোনার পাশাপাশি এতোদিন স্কুল খোলা ছিলো, স্কুলের ট্যুরও বন্ধ। এখানে যারা আসেন বেশিরভাগ ফ্যামেলি ট্যুরে আসেন। সে হিসেবে ফ্যামেলির কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আর আসা হয় না।
তিনি আরো জানান, মানুষের মধ্যে আতংক কাজ করছে। বিশেষ করে যারা আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়েছেন তারা ভয়ে আসতে চায় না। হোটেল মোটেলে শুক্রবার মোট ৪০% রুম বুকিং ছিলো বলেও জানান তিনি।
প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে করোনা। নতুন করে যুক্ত হয়েছে ওমিক্রন। এ কারনে আতংক কাজ করলেও মাস্ক পড়া নিশ্চিত করাসহ সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে প্রতিদিন ৩-৪ টি টিম নিয়ে প্রতিনিয়ত হোটেল মোটেল জোনসহ শহরের বিভিন্ন স্পটে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান।
তিনি জানান, নিয়মিত অভিযান হিসেবে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে হোটেলগুলোতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোন বিষয়ে অসঙ্গতি পেলে জরিমানাও করা হচ্ছে। বিশেষ করে পর্যটকদের মাস্ক ছাড়া সমুদ্র সৈকতে ঘুরাফেরা করতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। মাস্ক পড়া নিশ্চিত করতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
ইবাংলা/ টিআর/ ২২ জানুয়ারি