বরগুনায় অসহায় বৃদ্ধ দম্পতির কষ্টের জীবন
গোলাম কিবরিয়া, বরগুনা
সালেহা বেগম (৬৫) ও তার স্বামী মানিক হাওলাদার (৭০) এই বৃদ্ধ দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে জীর্ণশীর্ণ ঘরে বসবাস করছেন। অভাবের তাড়নায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করতেন কিন্তু বয়সের ভারে এখন কাজ করতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে ঝুপরি ঘরেরই কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন। এই বৃদ্ধ দম্পতির বাড়ি বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার বরবগী ইউনিয়নের মালিপাড়া গ্রামে।
বৃদ্ধ দম্পতি বলেন, অভাবের তাড়নায় ঝুপড়ি ঘরের সামনেই একটি চায়ের দোকান দিয়েছিলেন। প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ টাকা বিক্রি হয় এতে তাদের সংসার চলছে না। গ্রামের অনেকেই নানা রকমের সরকারি বা বেসরকারি সুযোগ সুবিধা পেলেও এ পর্যন্ত কিছুই জুটেনি তাদের ভাগ্যে।
সরজমিনে দেখা যায়, বেড়ায় বড় বড় ফুটো হয়ে গেছে, থাকার একমাত্র ঘরটি জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। শীতের কনকনে ঠান্ডায় নির্ঘুম রাত কাটে তাদের। জরাজীর্ণ ঘরটি যেকোনো সময় দুর্যোগ আসলে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জীবিকার তাগিদে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ঝুপরি ঘরের কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
সালেহা বেগম বলেন, পাঁচ বছর ধরে শ্বাসকষ্ট রোগের ভুগছেন, ভারি কোনো কাজ করতে পারেন না। ফলে একরকম অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে তাদের। ঝুপড়ি ঘরে সামনেই একটি চায়ের দোকান দিয়েছিলাম। গত ১৫ দিন ধরে দোকানের মালামাল কেনার টাকা নেই, দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমাদের ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
এই দম্পতির সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের সংসারে তিন ছেলে থাকলেও প্রায় ৫ বছর আগে বড় ছেলে হোসেন হাওলাদার ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
আপসোস করে সালেহা বেগমের স্বামী মানিক হাওলাদার বলেন, একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য মেম্বার চেয়ারম্যানের কাছে দিনের পর দিন ধরনা দিয়েছেন তিনি। তারা শুধু বলে এই কিছুদিন পরেই নাম নেওয়া হবে কিন্তু কত মানুষের নাম নিলো শুধু আমাদেরটাই নেওয়া হলো না।
প্রতিবেশী জেসমিন বেগম জানান, তাদের বড় ছেলে হোসেন হাওলাদার ক্যান্সার রোগে মারা যাওয়ার পর খুব কষ্টে দিন কাটছে তাদের। এখন ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে চা বিক্রি করছেন। দোকানের মালামাল নেই আর কেনারও টাকা নেই। সরকারি বা বেসরকারি আর্থিক কোনো সহযোগিতা পেলে তাদের কষ্ট কিছুটা কমতো।
বড়বগী ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য সেলিনা আক্তার (ইভা) বলেন, মানিক হাওলাদার ও সালেহা বেগম বৃদ্ধ হয়ে গেছে। তেমন কোন কাজ বাজ করতে পারে না, শারীরিকভাবে অক্ষম। ওনার ছেলে ছিল তারা ক্যান্সার রোগে মারা গেছে। অভাবের তাড়নায় ঝুপড়ি ঘরের সামনে একটি চায়ের দোকান দিয়েছিলেন এখন সেই দোকানটি বন্ধ রয়েছে। তারা খুবই মানবতার জীবন যাপন করছেন।
এ অসহায় দম্পতিকে সহযোগী করতে চান তাহলে যোগাযোগ করতে পারেন।
এ বিষয়ে তালতলীর ইউএনও কাওসার হোসেন বলেন, তাদের বিষয় খোঁজখবর নেয়া হবে, এছাড়াও সহযোগী করার আশ্বাস দিয়েছেন।
ইবাংলা /এইচ/ ২৫ জানুয়ারি, ২০২২