নড়াইলের ইতনায় খেলার মাঠ দখলের প্রক্রিয়া অব্যহত রেখেছে প্রভাবশালীরা। নানা কৌশলে ভূমিদস্যুচক্র দখলবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। এতোকাল ধরে মাঠের দক্ষিণ পাশে কবরস্থানের কার্যক্রম চালানো হলেও বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে মাঠের উত্তর পাশে একটি নতুন কবর দেয়া হয়েছে।
এ কবর দেয়ার পরই এলাকার মানুষের নিকট দখলবাজীর বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেছে। বেরিয়ে এসেছে দখলবাজদের আসল চেহারা। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহি ইতনা গ্রামের এ খেলার মাঠটি অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে গেলে কোমলমতি মিশু কিশোররা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হবে।
একটি কুচক্রীমহল ইতনা গ্রামের মধ্যপাড়ার এ খেলার মাঠটি অনেক আগে থেকে কবরস্থানের নামে দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। জানা গেছে, দীর্ঘ ৪ পুরষের খেলার মাঠটি কবরস্থানের নামে ভূমি দস্যুরা গ্রাস করতে যাচ্ছে। তাদের অপকৌশলে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে যুব, কিশোর থেকে শুরু করে কোমলমতি শিশুরা।
মাঠটির দু’পাশে ইতোমধ্যে পাকা বাউন্ডারী নির্মান কাজ শুরু হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে মাঠের চারপাশ থেকে বাদ রাখা হয়েছে বেশ কিছু জমি। মাঠের মাঝে রাখা হয়েছে ইটের খোয়া ও বালুর স্তুপ। মাঠে যাতে শিশুরা খেলতে না পারে সে জন্য মাঠে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে ইটের খোয়া।
অভিযোগকারীরা জানান, তাদের দাদা, বাবা-চাচারা, তারা নিজেরা ও তাদের সন্তানেরা বংশ পরম্পপরায় এই মাঠে খেলাধুলা করে আসছেন। বর্তমানে খেলার মাঠটি ইতনার একটি কুচক্রী মহল কবরস্থানের নামে দখল করার পায়তারা চালাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দ জাফর আলী, মোল্যা আঃ রউফসহ আরো অনেকে বলেন, ইতনা গ্রামের তছলিম উদ্দিন সরদারের ছেলে মোঃ লিপু সরদার, শাহীন সরদার, মাওলানা আব্দুল হান্নানসহ ৫/৬ জন এই খেলার মাঠটিকে কবরস্থানের নাম করে নিজেদের দখলে নেয়ার চেষ্টা অব্যহত রেখেছে।
সরকারি খ” তফসিল ভুক্ত জমিতে যুগ যুগ থেকেই গড়ে উঠেছে খেলার মাঠটি। পূর্বে খেলার মাঠটি ইসাকের মাঠ ও পরবর্তীতে ইতনা ইউনাইটেড ক্লাবের মাঠ নামে পরিচিতি রয়েছে। কি কারনে এই খেলার মাঠ দখল করে কবরস্থান তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেটা সকলে বুঝলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা কেউ।
স্থানীয়রা আরো জানান, এলাকার লোকজন শিশুদের খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত করে মাঠটিকে কবরস্থান বানাতে দিতে চাননা। গ্রামে কবরস্থান রয়েছে। তারপরও যদি কবরস্থান বানাতে হয়, এ মৌজায় অনেক খাস জমি রয়েছে, সেই জমিতে কবরস্থান তৈরি করার সুযোগ রয়েছে।
মাঠে নিয়মিত খেলাধুলা করে এমন কয়েকজন কিশোর খেলোয়াড় মারুফ, তামিম, জাকারিয়া, সাকিম, সায়েমসহ আরো ১০/১৫ জন খেলোয়ার বলেন, তারা এই মাঠে প্রতিদিন খেলাধুলা করে। তাদের প্রায়ই গ্রামের কিছু লোক খেলাধুলা করতে বাধা দেন।
মাঠে যাতে খেলতে না পারে সেজন্য ইটের খোয়া ছড়িয়ে রাখে তারা। কিশোররা আবেগ আপ্লুত হয়ে বলে, তারা শুনেছে এখানে নাকি কবরস্থান বানানো হবে। তাহলে তারা খেলবে কোথায় ? এমন প্রশ্ন রেখে তারা মাঠটি রক্ষায় জেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
ইতনা গ্রামের আব্দুল হান্নান ও লিপু সরদার বলেন জোর করে খেলার মাঠ দখল করার প্রশ্ন উঠে না। গ্রামবাসি যেখানে জায়গা দিবে সেখানেই গড়ে উঠবে কবরস্থান।
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোসলিনা পারভিন জানান, বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। তবে মাঠের দক্ষিন পাশে কবরস্থানের জায়গায় কবরস্থান থাকবে এবং খেলার মাঠ যেটুকু বাচ্চারা খেলে সেটুকু খেলার মাঠই থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য এমনটি হলেও দখলবাজরা কেবলমাত্র মাঠটি দখলের উদ্দেশ্যে মাঠের উত্তরপাশে বৃহস্পতিবার (১৭মার্চ) একটি লাশের দাফন সম্পন্ন করেছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। খেলার মাঠটি রক্ষার জন্য সচেতন মহল জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ইবাংলা/ জেএন/ ১৮ মার্চ, ২০২২