দুর্নীতি আর অনিয়মে চলছে শাহ আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ

মিরাজ মাহবুব ইফতি, ঢাকা :

রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত হযরত শাহ আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. ময়েজ উদ্দিনের নামে অর্থ আত্মসাত, দুর্নীতি জবরদখল, স্বাক্ষর জালিয়াতি, ছাত্রীর মায়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িতসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে।

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুদক, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ। এখানেই শেষ নয়, চলতি বছরে সিএমএম কোর্টে হয়েছে তার বিরুদ্ধে মামলা। এরপরও অধ্যক্ষের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় চলছে কলেজ।

সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও জিআর ইনস্টিটিউটে নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ ও অর্থ আত্মসাৎসহ বেশকিছু অভিযোগে অধ্যক্ষ ময়েজকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আরও জানা যায়, ২০১২ সালের হযরত শাহ আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন তিনি। ২০১৬ সালে দুর্নীতিরদায়ে কলেজ কমিটির সভাপতি তৎকালীন সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলাম তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এত কিছুর পরও এখন পর্যন্ত অধ্যক্ষ পদে বহাল তবিয়তে আছেন ময়েজ উদ্দিন।

ভুক্তভোগী হযরত শাহ আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ সহকারী অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, কলেজের কলেজের অধ্যক্ষের অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি ও লুচ্চামির বিরুদ্ধে অনেক জায়গায় অভিযোগ করেছি।

ময়েজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে ১৭ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ২০২০ সালে ২৭ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও একই বছরের ৯ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছি। এখন পর্যন্ত তার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কলেজে তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।

অধ্যক্ষের দুর্নীতির বিষয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যয় দেখিয়েছেন ২ কোটি ৭৮ লাখ ৬শ ৪০ টাকা। তার ক্যাশবুকে ব্যয় লেখা আছে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৬ হাজার ২শ ২০ টাকা। এখানে ১১ লাখ ৪ হাজার ৪শ ২৪ টাকার গরমিল। এই গরমিল কেন ও কী কারণে হয়েছে? তিনি (অধ্যক্ষ) নির্দিষ্ট কোনো কারণ দেখাতে পারেননি।

শিক্ষকদের টাকা আত্মসাতের কথা উল্লেখ করে সহকারী অধ্যাপক বলেন, আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনেক পরীক্ষার ডিউটি করে থাকি। সেই সব পরীক্ষার ডিউটির ফি নিয়ম অনুযায়ী কলেজের ব্যাংক একাউন্টে জমা হওয়ার কথা।

কিন্তু সেই টাকা শিক্ষকদের মধ্যে বন্টনের দায়িত্ব অধ্যক্ষের। আমাদের ডিউটি টাকা অধ্যক্ষ তার নিজ ব্যাংক একাউন্টে রাখেন। সেখান থেকে টাকা উত্তোলন করে তার ইচ্ছেমতো শিক্ষকদের দিচ্ছেন। যদি আমাদের বিল আসে এক লাখ টাকা। মাত্র ৩০ হাজার টাকা শিক্ষকদেরকে দিয়ে বাকি টাকা নিজের একাউন্টে রেখে দেন অধ্যক্ষ।

শাহ আলী শপিং কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, কলেজের জায়গা জবরদখল ও দুর্নীতির দায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২৫ মে আমি সিএমএম কোর্টে মামলা করেছি। মামলাটি এখন তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। এছাড়াও কলেজের এক ছাত্রীর মায়ের সঙ্গে অধ্যক্ষের অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। অধ্যক্ষ ময়েজ বিভিন্নভাবে ওই ছাত্রীকে কলেজ থেকে সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার এখানে ২৪টি দোকান আছে। কিন্তু শপিং কমপ্লেক্সের জায়গার মালিক হচ্ছে কলেজ। এ কারণেই অধ্যক্ষ ময়েজ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে দোকান মালিকদের হয়রানি করে যাচ্ছেন। তিনি আমার চারটি দোকান দখল করতে চেয়েছিলেন। তখন আমি তার নামে শাহাআলী থানায় অভিযোগ করি।

শাহ আলী থানার মাধ্যমে তার সঙ্গে আমার সমঝোতা হলেও তিনি আমার প্রতি আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। হযরত শাহ শপিং কমপ্লেক্সের দোকান মালিকদের কাছ থেকে টাকা ছাড়া কোনো দোকান বুঝিয়ে দেয় না। বিভিন্নভাবে হয়রানি করে যাচ্ছেন দোকান মালিকদের।

কলেজটির গভর্নিং বডি সাবেক সভাপতি ও বর্তমান হিতৈষী প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অধ্যক্ষের দুর্নীতি তো রেকর্ডেট। তার নামে অনেক অভিযোগ রয়েছে। অধ্যক্ষ ময়েজ বিগত সময়ের সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলামের সই জাল করে ছিলেন। কলেজে গিয়ে খোঁজ নিলে তার সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য জানা যাবে।

ই-বাংলা.প্রেস/ আইএফ/ ১২ আগস্ট, ২০২১

Contact Us