বরগুনার বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) বশিরুল আলমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সময় তার বাসায় রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন লোক গিয়ে ওসির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগটি প্রত্যাহার করতে ভয়ভীতিসহ নানান চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
জানা যায়,বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) বশিরুল আলমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করেছেন এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। ওসির বিরুদ্ধে সেই অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নিতে চাপ প্রয়োগ করছেন কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা।
এমনকি তারা এ পরিবারটিকে ভয়ভীতিও দেখাচ্ছেন। তাদেরকে জিম্মি ও মিথ্যা হয়রানী করে মোটা অংকের চাঁদা নেয়ার প্রতিবাদ ও ওসি বশিরুল আলমের বিচারের দাবীতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি পুলিশে ডিআইজি অপরাধ ও প্রসাশন হেডকোয়ার্টার , উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক ( বরিশাল বিভাগ ), বরগুনা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে এমন অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সেই অভিযোগের সত্যতা মেলায় ওসি বশিরুল আলম ওরফে বশির দিশেহারা হয়ে প্রভাবশালী নেতাদের ব্যবহার করছেন। ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের দায়ের করা অভিযোগটির তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানা যায়।
ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোসাম্মদ শাহানা বেগম জানান,কিছু দিন আগে বামনা উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মূর্তজা আহসান মামুন স্যার প্রথমে আমার স্বামীক তার বাসবভনে ডেকে নেন। পরে আমাকে ডাকেন এবং বলেন বামনা ওসির বিরুদ্ধে তোমরা যে অভিযোগটি করেছো সেটি তুলে নেয়। তা না হলে তোমাদের বিরুদ্ধে যেকোন মিথ্যা মামলা দিয়ে আসামি করতে পারে।
আরেক ভুক্তভোগী মুক্তি যোদ্ধার সন্তান ব্যবসায়ী রাসেল জানান, আমার ভোন বামনার ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তিনি বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আমাকে ও আমার পরিবারকে নানাবাভে ভয়বিতীসহ হুমকি দিয়ে আসছে এবং অনেক লোকের মাধ্যমে আমাদের কথাগুলো রেকর্ড করে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা এসব থেকে পরিত্রাণ চাই।
এ বিষয়ে জানার জন্যে অভিযুক্ত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ মানজুরুর রব মুর্তাযা আহসান মামুনের সাথে একাদিকভার তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,সম্প্রতিতে তিনি মিথ্যা অভিযোগ এনে ব্যবসায়ী রাসেল মল্লিকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে পরে ৯৯৯ এ কল করায় সে ঘুষের টাকা ফেরত দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি ভুয়া অভিযোগ এনে নিরীহ মানুষকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে পুনরায় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন।
এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার সকালে বরগুনা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিকের মাধ্যমে বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার বরাবর বামনার ওসি বশিরুল আলমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন ব্যাবসায়ী রাসেলের বড় বোন শাহানা বেগম।
তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, বরগুনার বামনা উপজেলার খোলপটুয়া বাজারে ইলেকট্রিক ব্যাবসায়ী রাসেল মল্লিকের বিরুদ্ধে দুই নম্বর ইলেকট্রিক পণ্য বিক্রি করার অভিযোগ এনে ওসি বশিরুল আলম তাকে থানায় ডাকেন। পরে স্বজনরা থানায় গেলে ওসি বলেন, রাসেল নিন্মমানের তার বিক্রি করে।
ওকে এখন কোর্টে চালান দেয়া হবে। এসব ভয়ভীতি দেখিয়ে ৪০ হাজার টাকা ব্যাবসায়ী রাসেলের স্বজনের কাছে ঘুষ দাবি করে। পরে স্বজনরা কোনো উপায় না পেয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসায়ী রাসেলকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে।
পরে রাসেল মল্লিক জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করে ২০ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়টি জানান। পরে ওসি বশিরুল আলম ঘুষ নেয়া ২০ হাজার টাকা আবার রাসেলকে ফেরত দিয়ে পরিবারের সকলকে শাসিয়ে যায় এবং বলে, ‘তোদের কপাল পুড়ছে। তোদের দেখে নিবো।
এছাড়াও গত তিন দিন আগে ভুক্তবোগী রাসেল ও তার পরিবার সহ আটজনের বিরুদ্ধে স্থানীয় একটি অসাধু চক্রকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ এনে হয়রানি করছে এবং মামলার ভয় দেখিয়ে এক লাখ টাকা আবারও চাঁদা দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, ওসির তদন্তের বিষয়টি এডিশনাল এসপি দেখছেন এবং অভিযোগ কারীকে যাতে কোন রকম হয়রানী না করা হয় সে জন্যে ওসিকে আমি বকা/ঝকাও করেছি।
এ বিষয়ে উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক এস এম আক্তারুজ্জামানের কাছে মুঠোফোনের মাধ্যমে জানতে চাইলে তিনি ‘ইবাংলাকে’ বলেন, “এটা অফিসিয়াল বিষয়, এটা অফিস ডিল করবে এসব ফোনে আলাপ করার বিষয় না” বলেই মুঠোফোন কেটে দেন।
ইবাংলা/ টিএইচকে/ ৬ এপ্রিল, ২০২২