ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকী। তাই বাগেরহাটের দর্জিদের চোখে ঘুম নেই। তারা ব্যস্ত কিভাবে যথা সময়ে গ্রাহকদের চাহিদা মেটানো যায়। এবার ঈদে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি কাটা কাপড়ের চাহিদা কম নয়। নাম করা টেইলারিং হাউজগুলোর পাশাপাশি ছোট ছোট টেইলারগুলোর কারিগরদের ব্যস্ততাও বেড়ে গেছে।
করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর কাজ না থাকায় একপ্রকার মানবেতর জীবন কাটিয়েছেন দর্জি শ্রমিকরা। সেই ক্ষতি পুশিয়ে নিতে এবার দিন-রাত কাজ করছেন তারা। তবে এবার শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটা পোশাকের মজুরি বেড়েছে ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা। এতে ক্রেতাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
এবছর শেষ মূহুর্তে অনেক বেশি কাজ এসেছে দর্জিদের কাছে। তাই সময় মত এসব কাজ গ্রাহকদের কাছে বুঝে দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন তারা। তবে পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণ ও দর্জি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গ্রাহক এবং টেইলার্স মালিকরা। নামিদামী টেইর্লাস গুলোতে ১০ থেকে ১২ রমজানের ভিতর অর্ডার নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য ছোট টেইলার্সগুলোতে ২০ রমজান পর্যন্ত কাজের অর্ডার নিয়ে থাকে। এবছর পুরুষের চেয়ে মেয়েদেরও লক্ষনীয় ভিড় দেখা যাচ্ছে টেইলার্সগুলোতে। রোজার শেষ মূহুর্তে তারা এসেছে তাদের অর্ডার দেয়া পছন্দের পোশাকগুলো নিতে।
দর্জিরা বলছেন, শবে বরাতের পর থেকেই শুরু হয়েছে ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের আনোগোনা। দিন গড়াতেই তাদের চাপ আরও বেড়েছে। ঈদ উপলক্ষে মজুরি তেমন না বাড়ালেও দর্জি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় পোশাক ভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি নিতে হচ্ছে।
বাগেরহাট শহরের দর্জিপট্টিতে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকেই এসেছেন তাদের পোশাকগুলো নিতে। তারা তৈরি পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে অন্য সামগ্রী কিনবেন এজন্যই আগে আগে আসা।
হাড়িখালী থেকে আসা কল্পনা আক্তার বলেন, পোশাকের ফিটিংয়ের জন্য এখানে আসা হয়। আমি রেডিমেড পোশাক ক্রয় করলেও আমাকে ফিটিংয়ের জন্য দর্জির কাছে আসা লাগে। যেকোনো ডিজাইন দিলে সেই অনুযায়ী দিতে পারে। এই জন্য আমি সেলাই করা জামা বেশি পড়ি। রেডিমেড পোশাক কম পরি।
এদিকে ছেলেদের পোশাক তৈরির দোকানগুলোতে মেয়েদের মত ততোটা ভিড় না থাকলেও শার্ট, প্যান্ট ও পাঞ্জাবি তৈরির সংখ্যা অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেড়েছে। গরমের কারণে এবার ব্লেজার, স্যুটের চাহিদা নেই বলে জানান ট্রেইলার মালিকরা।
বৈশাখী ট্রেইলার্সের মালিক পরিতোষ কুমার সাহা জানান, করোনার কারণে গত দুই বছর কাজ এক প্রকার ছিলো না। এ বছরে অনেক কাস্টমার। তবে এই বছর শার্ট প্যান্টের চাহিদা বেশি। দোকান থেকে কাপড় কাটার পর তা সেলাইয়ের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় কারখানায়। শ্রমিকদের সহায়তায় চেষ্টা করছি যথা সময়ে কাস্টমারদের তৈরি পোশাকগুলো দিতে।
সাধনা টেইলার্সের অধির কুমার পাল জানান, শেষ মুহুর্তে এসে অর্ডার হয়েছে বেশি। তবে অন্যবছরের তুলনায় টেইলার্সে ব্যবহৃত সামগ্রীর দাম ও শ্রমিকের মজুরি অনেক বেড়ে গেছে। তাই পোশাক তৈরিতে মজুরি না বাড়িয়ে উপায় নেই। ফলে চাপটা পড়ছে গ্রাহকদের ওপর।
কারিগররা জানান, মানুষ সব সময় পোষাক তৈরি করেনা। সাধারণত ঈদে তাদের কাজের চাপ বেড়ে যায়। এ আয় দিয়ে সারা বছর চলতে হয় তাদের। তাই তারা শরীরের দিকে না তাকিয়ে দিনরাত প্ররিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।
ইবাংলা / জেএন / ২৬ এপ্রিল, ২০২২