বরগুনার ৬ উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে । প্রথম পর্যায়ে ২৩২টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭৯৩টি এবং তৃতীয় পর্যায়ে ৭২৫টি ঘরের মধ্যে ৪১১টি ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এর মধ্যে আজ ২৬ এপ্রিল সদর উপজেলার খাজুরতলায় ৫০ টি জমিসহ ঘর হস্তান্তর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভিডিও কনফারেন্সে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ ঘরের উদ্বোধন ও চাবি হস্তান্তর করেন । এখানকার সুবিধাভোগীদের মধ্যে রয়েছে ভিক্ষুক, স্বামী পরিত্যক্তা, শারীরিকভাবে অক্ষম, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিসহ হিন্দু পরিবার।
এদের মধ্যে একজনের নাম আলেয়া, মাথা গোঁজার ঠাই হলো ব্রীজের নিচে বসবাস করা ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা আলেয়া বেগমের। গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বরগুনা শহরের বাজার ব্রীজের নিচে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। এখানেই একে একে জন্ম দিয়েছেন ৯ সন্তান, যাদের প্রত্যেককেই কেড়ে নিয়েছে এক সময়ের খরস্রোতা ভাড়ানী খাল। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের পাকা (টিনসেড) ঘর ও একটুকরো জমি পেলেন আলেয়া। আজ বেলা এগারোটায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এরপরই এরপরই জমি ও ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন আলেয়াকে।
জানা যায়, বৃদ্ধা আলেয়া বেগমের গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের মনসাতলী গ্রামে। তার শ্বশুরবাড়িও ছিল একই গ্রামে। ৩০-৩২ বছর আগে সংসারে অভাব অনটনের কারণে মায়ের সঙ্গে বরগুনা শহরে পাড়ি জমান আলেয়া। তখন থেকেই শুরু হয় তার আশ্রয়হীন জীবন। প্রথমে বরগুনার মাছ বাজার, সবজি বাজারে ভাসমানভাবে রাত্রিযাপন করার পর ভাড়ানী খালের বাজার ব্রীজের নিচে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। এখানেই কেটে গেছে ৩০-৩২ বছর।
৩০ বছরেও মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলেনি আলেয়ার। ব্রিজের নিচের খুপরি ঘরেই তিনি জন্ম দিয়েছেন ৮ ছেলে ও ১ মেয়ে। যাদের সকলকেই কেড়ে নিয়েছে ভাড়ানী খাল।
আজ ২৬ এপ্রিল গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঈদ উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের আওতায় জমিসহ একটি টিনসেড ঘর দেন ব্রীজের নিচে বসবাস করা আলেয়া বেগমকে।
আলেয়া বেগম বলেন, ৩০-৩২ বছর কাডাইছি ব্রীজের তলে, খালের পেটে দিছি নয়ডা গুরাগারা, এতকিছুর পর হপায় একটা মাথা গোঁজার ঠাই পাইলাম। শেখ হাসিনা আমার মা, হে আমারে ঘর দেছে। তার লইগ্গা খোদার দরবারে প্রান ভইরা দোয়া করমু।
আলেয়া আরও বলেন, মাপ মায়ের অভাবের সংসারে বড় হইছি। বিয়ার পর স্বামীও হালাইয়া থুইয়া গেছে। বড় পোলা বউ বাচ্চা লইয়া আলাদা থাহে। জীবনেও কহনো ইদের উপহার পাইনায়। তয় এবার আমার লইয়া সবচেয়ে দাবী ইদ ইউহার পাইলাম। বয়স ৭০ ছাড়াইছে, বাচমুও বা আর কয়দিন। তবুও এহন যদি বাকিডা সময় শান্তিতে রাহে আল্লাহ।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ব্রীজের নিচে থাকা আলেয়ার বিষয়টি নজল এলে আমরা তাকে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় আনি। আজ বেলা এগারোটায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরগুনার খাজুরতলা আশ্রয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ইবাংলা / জেএন / ২৬ এপ্রিল, ২০২২