টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ মে) জেলার সুরমা, যাদুকাটা, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ ফসলি জমি। সদর ও দেয়ারাবাজার উপজেলার অনেক পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ওই অঞ্চলের মাছ চাষিরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বন্যার কারণে পানি ওঠায় জেলার ছাতক-সুনামগঞ্জ-সিলেট, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ-হালুয়াঘাট-মঙ্গলকাটা সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কের গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় পানি উঠায় যান চলাচলে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে সুনামগঞ্জ শহরের সাহেববাড়ি, মধ্যবাজার, জেলরোড, লঞ্চঘাট, উকিলপাড়া, নবীনগর, বড়পাড়াসহ একাধিক পয়েন্টে পানি প্রবেশ করায় ভোগান্তিতে রয়েছেন নগরবাসী। অপরদিকে পানিবন্ধী অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন সুরমা নদীর তীরবর্তী সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর,দোয়ারাবাজার, ছাতক, ধর্মপাশাসহ অন্তত ১০ ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা, ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় সুনামগঞ্জ -সিলেট অঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে এবং টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে মাঝারি ধরনের বন্যার সৃষ্টি হতে পারে।
বন্যার্তদের সহযোগিতায় জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১০ টন চাল ও নগদ দুই লাখ টাকা এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৭ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এ ছাড়াও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের ওপরে অন্যান্য বন্যা কবলিত উপজেলায় চাল বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন। বন্যায় আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য বন্যার্ত এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খোলা রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার ও সদর উপজেলার উচ্চ এলাকার ৭০০ হেক্টর বোরো জমি এবং ৭০ হেক্টর চিনা বাদাম তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
সদর উপজেলার সুরমা ভৈষারপার স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, অনেক ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। আমাদের গ্রামের রাস্তায় পানি, স্কুলে পানি, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। কাংলার হাওর, রাঙ্গাউরি, ধরাবিলসহ কয়েকটি হাওরের স্কিমে চাষ করা জমির ফসল তলিয়ে গেছে। আরেক কৃষক বলেন, পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। তিনখানি জমি চাষ করেছিলাম একটু ধানও কাটতে পারিনি। হঠাৎ পানি এসে আমার সব নিয়ে গেছে।
ভারতে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সুনামগঞ্জের সুরমাসহ সকল নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামছুদ্দোহা।
জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পাহাড়ি ঢল অতি বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।বন্যা মোকাবিলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। সরকারের তরফ থেকে বন্যার্ত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে যাচ্ছে।
ইবাংলা/টিএইচকে/১৮মে.২০২২