রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় গত ৫ মাসে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে ৩০০টি। প্রতিমাসে গড়ে ৬০টির মতো বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ২-৩টি করে তালাক হচ্ছে। পুরুষের চেয়ে নারীরাই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাচ্ছেন বেশি। প্রায় সবগুলো আবেদনেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের সাধারণ শাখা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২২ মে পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের সবগুলো ওয়ার্ডের বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ৫ মাসে ৩০০ বিবাহ বিচ্ছেদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। এই সময়ের মধ্যে ১৮০ জন নারী বিবাহ বিচ্ছেদ করেছে। এছাড়া ১২০ জন পুরুষ বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ, স্বামীর মাদকাসক্তি, যৌতুক, নির্যাতনসহ বিভিন্ন কারণে নারীরা স্বামীকে তালাক দিচ্ছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি সংখ্যক রয়েছে শিক্ষিত ও ধনী পরিবারের। যৌতুক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং স্বামীর পরকীয়া আসক্তি ইত্যাদি কারণে নারীদের মাঝে বিচ্ছেদের প্রবণতা প্রতিদিনই বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিবাহ বিচ্ছেদের পরে অনেক নারী একাকীত্ব জীবনযাপন করেন। সম্প্রতি রংপুরে এক মধ্য বয়সী নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বিবাহ বিচ্ছেদের পরে ওই নারী একাই বাড়িতে থাকতেন। পুলিশের ধারণা বাথরুমে পরে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই নারী মারা যান। কয়েক দিন পরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিবাহ বিচ্ছেদ সমাজ জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যারা বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাচ্ছেন তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশই একা থাকছেন এবং একাকীত্ব অবস্থায় জীবনযাপন করছেন।
গত মাসে রংপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম-২-এর বিচারক দেবাংশু কুমার সরকারের নামে স্ত্রী হৃদিতা সরকারের যৌতুকের কারণে নির্যাতনের অভিযোগ মামলা হিসেবে নেয় আদালত।
বিচ্ছেদ হওয়া এক নারী বলেন, স্বামী কথায় কথায় সন্দেহ করতেন। আবার অন্য নারীর প্রতি আসক্তি থাকায় সংসারে প্রায় অশান্তি লেগে থাকত। তাই বাধ্য হয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিচ্ছেদ হওয়া এক পুরুষ জানায়, বিয়ের পর থেকে নানা কারণে মিল না হওয়ায় তাই তালাকের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
রংপুর জজকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল জলিল বলেন, তালাক হচ্ছে একমাত্র আইনগত পদ্ধতি যার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তালাকের জন্য প্রথমে নোটিশ প্রদান করতে হয়। এর পর সালিসের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন পড়ে। সব শেষ ৯০ দিন অতিবাহিত হেওয়ার পরে তালাকের সার্টিফিকেট একজন রেজিস্টার্ড নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়। তালাকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের সাধারণ শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাইমউল হক জানান, প্রতি মাসেই ৬০ থেকে ৭০টি তালাক কার্যকর হচ্ছে। কোনো পক্ষই আপস করছেন না। গত ৫ মাসে সিটি করপোরেশনে ৩০০ তালাক কার্যকর হয়েছে। আপসের সংখ্যা নেই বললেই চলে।
রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের পিপি আইনজীবী রফিক হাসনাইন বলেন, সামাজিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে নারী নির্যাতন এবং তালাকের ঘটনা। এর মধ্যে সমাজের বিত্তবানদের সংখ্যাই বেশি।
এদের মধ্যে সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির শিক্ষিত মেয়েরা তারা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিদিন অনেক অভিযোগ দাখিল হচ্ছে নারী ও শিশু আদালতে। কিছু মামলার আপস-মীমাংসা হলেও বেশির ভাগই তালাক হচ্ছে।
ইবাংলা /জেএন /২৩ মে,২০২২