খরা ও দুর্ভিক্ষের নির্মম চিত্রের প্রতিফলন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আরবে মাহাদ কাসিম ইতোমধ্যেই ভয়ংকর খরা ও দুর্ভিক্ষের কারণে তার দুই সন্তান হারিয়েছেন এবং এখন সোমালি গ্রামবাসী আশঙ্কা করছে যে তিনি তার তৃতীয় সন্তানটি হারাতে পারেন, কারণ তার অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশু ইফরাহ মোগাদিসুর একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে।

বানাদির ম্যাটারনিটি অ্যান্ড চিলড্রেন হাসপাতালে ভীড় করছেন এমন কয়েক ডজন ক্লান্ত বাবা-মায়ের মধ্যে কাসিমও রয়েছেন, যা আফ্রিকার শৃঙ্গ (হর্ন অফ আফ্রিকা) হিসেবে পরিচিত সোমালিয় ও পাশ্ববর্তী অঞ্চল জুড়ে ভয়াবহ খরার কারণে চরম অনাহার সংকটের গ্রাউন্ড জিরো হয়ে উঠেছে।

কম বৃষ্টিপাতের ফলে ফসল বিনষ্ট এবং গবাদি পশু মারা যাওয়ার পর পুরো গ্রামগুলো তাদের জীবন উপড়ে ফেলেছে এবং তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। গত মাসে যখন টানা চতুর্থবারে মৌসুমের বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থা এবং আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছিলেন যে সোমালিয়া, কেনিয়া ও ইথিওপিয়ায় দুর্ভিক্ষ চলছে।

তবে কাসিমের মতো অনেক সোমালি গত কয়েকমাস সরকারী সীমিত সহায়তায় টিকে আছেন, কিন্ত বিপর্যয় তাদের ইতোমধ্যেই আঘাত করেছে। গত ১৮ মাসে কাসিমের দুই সন্তান ক্ষুধায় মারা গেছে।

যখন দুই বছর বয়সী ইফরাহের ছোট শরীর ফুলে উঠতে শুরু করে, গুরুতর অপুষ্টির লক্ষণ দেখা যায় তখন কাসিম তার সবচেয়ে ছোট সন্তানের জীবন বাঁচাতে সময় নষ্ট না করে মরিয়া হয়ে তার গ্রাম থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে মোগাদিসুতে ছুটে যান।

বানাদির হসপিটালে সন্তানদের ভয়ংকর পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত অভিভাবকদের ভিড় উপড়ে পড়ছে।তাদের কেউ কেউ অসুস্থ কঙ্কাল দেহের বাচ্চাদের পিঠে নিয়ে সাহায্যের জন্য কয়েকদিন ধরে হেঁটেছেন।

অনেকেই এএফপিকে বলেছেন যে, তারা কখনোই এমন ভয়ানক সংকটের মধ্যে পড়েননি। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা এ অবস্থার ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছেন, চারদশকের মধ্যে নজিরবিহীন এই ভয়ংকর খরা কখনো দেখা যায়নি।

বনাদির হসপিটালে ১৪ মাসের সন্তান বিল্লালকে ভর্তির জন্য নিয়ে আসা তার মা খাদিজা মোহাম্মদ হাসান বলেন,“ফসল বিনষ্ট হয়েছ। আমরা গবাদি পশু হারিয়েছি। নদী শুকিয়ে গেছে।”
তিনি এএফপিকে বলেন, ‘আমি আমার ৪৫ বছরের জীবনে এমন বিধ্বংসী খরা কখনো দেখিনি। আমরা আমাদের সময়ের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে বাস করছি।

বেসরকারি সংস্থা কনসার্ন ওয়াল্ডওয়াইড-এর বাসার ওসমান হুসেইন বনাদির হাসপাতালের গুরুতর পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন, তিনি ২০১৭ সাল থেকে সহায়তায় নিয়োজিত আছেন।
তিনি এএফপিকে বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গুরুতর অপুষ্টি এবং অন্যান্য জটিলতা নিয়ে বনাদির হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের সংখ্যা প্রতিমাসে ১২০ থেকে ২৩০ জনে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, অক্টোবর-নভেম্বর মাসেও বৃষ্টি না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং সে ক্ষেত্রে এই অঞ্চল আরো বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।

ইবাংলা / জেএন / ১৫ জুন,২০২২

Contact Us