গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুতে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শেখ মো. এনামুল হক। পরিচয় গোপন করতে সে কখনো হয় কলেজের
প্রভাষক, কখনো হয় অধ্যক্ষ, কখনো চিকিৎসক। অবশেষে র্যাবের জালে ধরা পড়লেন তিনি। গত রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
রোববার (১৯ জুন) বেলা ১২ টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তার গ্রেফতারের তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুতে প্রধানমন্ত্রীকে
হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামি শেখ মো. এনামুল হক ওরুফে শেখ মো. এনামুল করিমকে (৫৩) কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
২০০০ সালে গোপালগঞ্জের জনসভার অদূরে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুতে রাখা হয়। এ ঘটনায় কোটালীপাড়া থানায় হত্যাচেষ্টা, হত্যার ষড়যন্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৩টি মামলা হয়। তদন্ত শেষে মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ গ্রেফতারকৃত শেখ মো. এনামুল হক ওরুফে শেখ মো. এনামুল করিমসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন জানায়, ব্যবসায়ীক সূত্র ধরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও তৎকালীন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজি’র আমীর মুফতি আব্দুল হান্নানের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।
২০০০ সালে গোপালগঞ্জে বিসিক শিল্প নগরীতে মুফতি হান্নারের ছোট ভাই আনিসের সাথে যৌথভাবে প্লট বরাদ্দ নিয়ে “সোনার বাংলা ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ” নামে টুথপেস্ট, টুথপাউডার, মোমবাতি ও সাবান তৈরির একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। মুফতি হান্নান ও অন্যান্য জঙ্গি নেতারা ২০০০ সালের জুলাই মাসে বেশ কয়েকবার ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে।
তিনি বিভিন্ন সময়ে মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য জঙ্গি নেতাদের সাথে গোপন বৈঠক এবং সমাবেশে অংশগ্রহণ করত। মুফতি আব্দুল হান্নানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করার জন্য পরস্পর যোগসাজশে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের হত্যার উদ্দেশ্যে সভাস্থলে বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে এনামুল।
তিনি জানায়, এঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে এনামুল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে সে নিজের পরিচয় গোপন করে ক্বারী না হওয়া সত্ত্বেও ক্বারী পরিচয় দিয়ে গাজীপুরের একটি মসজিদে ৮ বছরের অধিক সময় ইমামতি করে।
গাজীপুরে অবস্থানকালীন সময়ে সে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। একটি হোমিও প্যাথি কলেজে ২ বছর প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বলে জানা যায়। একইভাবে সে নিজেকে গাজীপুর হোমিও কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ হিসেবে দাবী করত।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০১০ সালে সে ঢাকার উত্তরা ও বনশ্রীতে বাসা ভাড়া করে বসবাস করতে থাকে। ঢাকার উত্তরায় ২০১৫ সালে ‘আই কে হোমিও কলেজ উত্তরা’ নামে একটি ভুয়া হোমিও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে।
পরবর্তীতে ২০২০ সালে ‘আই কে হোমিও কলেজ উত্তরা’ নামক প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে সে ক্যান্সার নিরাময় কেন্দ্র নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুলে ক্যান্সারের ভুয়া হারবাল চিকিৎসা প্রদান শুরু করে। তার চিকিৎসায় ক্যান্সার সম্পূর্ণরূপে ভাল হয় বলে সে দাবী করত। সে এইডস রোগ নিরাময়ে চিকিৎসা প্রদানে সক্ষম বলে দাবী করত। সে সবসময় নিজস্ব গন্ডির মধ্যে চিকিৎসা প্রদান করত।
এছাড়াও, সে নিজেকে হেপাটাইটিস-ভাইরাস, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিকস, মেদ, বন্ধ্যাত্ব, টিউমার, হার্ট, কিডনী, যৌন, মানসিক রোগসহ বহুবিধ রোগের সফল চিকিৎসক হিসেবে দাবী করত বলে জানা যায়।
ইবাংলা / জেএন / ১৯ জুন,২০২২