কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল; সৈকতে ফিরে এসেছে প্রাণচঞ্চলতা

ইবাংলা ডেস্ক :

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের রূপ লাবণ্যময় বিশ্বের সেরা পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যটকের পদচারণায় বিভোর। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের কক্সবাজার পর্যটন নগরী এখন পর্যটক শূণ্য বললে চলবে না।

এবারের ঈদুল আজাহর পর থেকে পর্যটক নিয়ে জমে উঠেছে দেশের দক্ষিণ জেলা কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতসহ বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থিত পর্যটক স্পট। দেশের শহরাঞ্চল ছাড়াও গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষও এবারে এ ঈদে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে বিনোদনের বিভিন্ন স্পটে। এ সব পর্যটন স্পটে দিন দিন মানুষের ভিড় বাড়ছে।

কক্সবাজার জেলার দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত,হিমছড়ি,রামুর রামকোট, ১০০ ফুট দীর্ঘ গৌতম বুদ্ধের সিংহ শয্যার ভাস্কর্য, বৌদ্ধ বিহার,টেকনাফের মাথিনের কূপ,সেন্টমার্টিন দ্বীপ,মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির,চকরিয়া ডুলাহাজারার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক,মানিকপুরের নিভৃতে নিসর্গ, কুতুবদিয়ার বাতিঘর এখন পর্যটকের আনাগেনায় মূখরিত হয়ে উঠেছে।

জেলার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল মোটেল,রেস্তোরা এখন ভরপুর। খাবারের হোটেলগুলোতে নানা রকম খাবার তৈরির প্রতিযোগিতায় নামছে হোটেল মালিক পক্ষ। রুচিসম্মত খাবার পরিবেশনের জন্য হোটেল মোটেল মালিকপক্ষ নিয়োগ করছে বাড়তি লোকবল।

প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ খাবার তৈরির জন্য হোটেল কতৃপক্ষ গ্রাম থেকে সরবরাহ করছে বিভিন্ন খাদ্য উপদান। মাছ মাংসের পাশাপাশি সবজির সরবরাহও কম করছে না তারা।সাথে রাখছে শাক,ভর্তা,ভাজিসহ হরেক রকম খাবার।

এ ব্যাপারে বিভিন্ন খাবার হোটেলে মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে,দীর্ঘ দিন মাংসাশী হওয়ায় অনেকে সবজির প্রতি ঝোঁকছে।ফলে সবজি রান্নার ক্ষেত্রে আধুনিকতা না থাকলে গ্রাহকরা বিমুখ হয়ে ফিরবে,এতে লোকসানের আশংকা আছে। তাই মাছ,মাংসের পাশাপাশি উন্নত মানের মূখরোচক সবজির তরকারি থাকছে প্রতি বেলায়।

দূর থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকরা জানালেন,খাদ্যের মান কোনো কোনো হোটেলে মোটামুটি ভাল আবার কোনো কোনো হোটেলে খাবার তেমন ভাল নয়। তবে এসব খাবারের মূল্য বেশি গুণতে হয় ভ্রমণোৎসুক পর্যটকদের।

এ ব্যাপারে সাধারণ খাবার হোটেল মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে,দ্রব্যমূল্যের উর্ধ গতির ফলে খাবারের মূল্য একটু বেশি নির্ধারণ করতে হয়েছে। দোকান ভাড়া,কর্মচারীর বেতন,মূলধন বিনিয়োগ সব মিলিয়ে লাভের আশায় হয়তো একটু বেশি দাম

নিতে হচ্ছে। এর পরও আগন্তুক পর্যটকরা বছরে দু’একবার ঘুরতে এসে খরচ একটু বেশি করলেও সন্তোষ্ট। তবে নিরাপদে ভ্রমণ শেষে বাড়ী ফিরতে পারলেই হলো তাদের।

বর্ষার ভরা মৌসুমে বৃষ্টির দেখা না থাকায় পর্যটকরা অবাধে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরতে পারছে।অভিরাম বৃষ্টি না থাকায় ভ্রমণ আনন্দদায়ক হয়ে উঠছে পর্যটকদের। বর্ষাকাল হলেও এমন রোদেলা দিনে গরমে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে ট্যুরিস্টদের। বিশেষ করে শিশুরা মারাত্বক গরমের ফলে অসুস্থ হওয়ার পথে। আবার অনেকে অসুস্থ হয়েও পড়ছে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন এলাকায় বর্তমানে পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ তারকা ও তিন তারকা মানের হোটেল মোটেল রয়েছে শতাধিক। এ সব হোটেল মোটেলে দেশের আভিজাত্য পরিবারগুলো রাত যাপনের জন্য

বুকিং দিয়ে থাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আসার পূর্বে।
জানালেন, হোটেল মোটেল সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার। তিনি আরো জানালেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে প্রায় দুই বছর হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হয়েছিল।

বিগত রমজানের ঈদ শেষে কক্সবাজারের এ সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের হৈচৈ দেখা দিলেও পরে দু’এক মাস পর্যটক শূণ্য পড়েছিল। কোরবানের এ ঈদে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত আবার প্রাণ ফিরে পাওয়ায় হোটেল মোটেল ব্যবসায়ী ও অন্যান্য

ব্যবসায়ীরা ভাল আয়ের পথ দেখছে। আশা করি,আগামী শীত মৌসুমেও পর্যটকদের আনাগোনায় ভরপুর থাকবে এতদ অঞ্চলের পর্যটক স্পটগুলো।

এদিকে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পর্যটকরা দামী হোটেলের চেয়ে মধ্যম মানের হোটেল মোটেল পছন্দ করে। এসব মধ্যম মানের হোটেল কক্ষে থাকার মূল্য রাত-দিন মিলে দুই হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে নেয়। এ ছাড়া নিম্ন মানের হোটেল এক হাজার টাকার উর্ধে। সমুদ্রের কাছাকাছি হোটেলগুলোর দাম একটু বেশি।

সৈকতের ঝিনুক মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে,নানান রকম পণ্য সামগ্রীর সাজ-সজ্জায় মার্কেটে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। এসব মার্কেটের পণ্যের প্রতি পর্যটকরা আকৃষ্ট হয়ে পণ্য ক্রয়ে ভিড় করছে। অনেকে শখের বশে মূল্য বেশি দিয়েও কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। পর্যটকদের নিরাপদে ভ্রমণের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সর্বদা নজর রাখছে।

ইবাংলা/বায়েজীদ/১৩জুলাই,২০২২

Contact Us