সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ নিহত ৩২, পেট ফেটে শিশুর জন্ম

ইবাংলা ডেস্ক

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় ট্রাকচাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যান স্বামী, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও এক মেয়ে। তবে অন্তঃসত্ত্বা ওই গৃহবধূর মৃত্যু হলেও দুর্ঘটনার সময় পেট ফেটে বিপজ্জনকভাবে জন্ম নেয় এক কন্যা শিশু। শিশুটি অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়।

শনিবার (১৬ জুলাই) দেশের অনেক মহাসড়কে যেন নামে মৃত্যুর মিছিল ছিলো। সড়ক দুর্ঘটনায় সবশেষ ১২ ঘণ্টায় অন্তত ৩২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছেন। এ ছাড়াও ঢাকা, হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ ১০ জেলায় আহত হয়েছেন ৩৪ জন।

আরও পড়ুন…টাঙ্গাইল ও বগুড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত

টাঙ্গাইলে আটজন, সিরাজগঞ্জে চারজন, বগুড়ায় চারজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুইজন, গাজীপুরে দুইজন, নীলফামারীতে একজন, ময়মনসিংহে তিনজন, হবিগঞ্জে তিনজন, দিনাজপুরে একজন, রাজশাহীতে একজন, চট্টগ্রামে একজন এবং ঝিনাইদহে একজন মারা গেছেন।

সড়ক দুর্ঘটনা মারা যাওয় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের পেট ফেটে বিপজ্জনকভাবে জন্ম নেয়া শিশুটির এক্সরে করার পর শিশুটির ডান হাতের দুটি অংশে ভাঙা দেখা গেছে। শিশুটিকে ময়মনসিংহ সদরের সিবিএমসিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালটির মেডিকেল অফিসার আরিফ আল নূর বলেন, আমরা বাচ্চাটির অবস্থা ভালো পেয়েছি। পরে এক্সরে করার পর ডান হাতের দুটি অংশে ভাঙা দেখা গেছে।

বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য ও খবর:
ঢাকা: ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ থানাধীন প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের সামনে বাসচাপায় ইব্রাহীম বিশ্বাস (২৪) নামে এক রিকশা আরোহী নিহত হয়েছেন। ইব্রাহীম বরিশাল উজিরপুর উপজেলার বিশ্বাসবাড়ি গ্রামের সান্টু বিশ্বাসের ছেলে। বিষয়টি জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার (এসআই) রাজু মুন্সি।

আরও পড়ুন…ভয়ে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেন না নায়িকা মাহি

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনসহ আটজন নিহত হয়েছেন। দুপুর ১২টার দিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের পাকুল্লায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাসচাপায় মা ও দুই ছেলে-মেয়ে নিহত হন।

মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা টুটুল জানান, বেলা ১২টার দিকে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন মা। এ সময় দ্রুতগামী একটি বাস তাদের চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই মেয়ের (সাদিয়ার) মৃত্যু হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় মা ও ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পরে তারাও মারা যান।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরে বাসচাপায় দুই শিশু সন্তানসহ মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় মহাসড়ক অবরোধ করায় উভয়পাশে প্রায় ২৫ কিলোমিটার যানযট। ছবি- ইবাংলা

এর আগে ভোর পৌনে ৫টায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ভাতগ্রাম ইউনিয়নের দুল্যা মনসুর এলাকায় ঢাকাগামী বালুভর্তি একটি ট্রাকের পেছনে যাত্রীবাহী বিনিময় পরিবহনের একটি বাস ধাক্কা দিলে চারজন নিহত হন। দুর্ঘটনায় বাসের কমপক্ষে ১০ যাত্রী আহত হন। তাদের উদ্ধার করে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া মির্জাপুরের পাকুল্যায় বাসচাপায় আরেক শিশু নিহত হয়েছে। এ সময় নারীসহ দুজন আহত হন।

বগুড়া: প্রাইভেটকারে নওগাঁ থেকে চিকিৎসার জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে যাচ্ছিলেন চারজন। পথে কালিয়াপুকুর এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা মিনিট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় প্রাইভেটকারের। এতে ঘটনাস্থলেই চালকসহ তিনজন মারা যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও একজনের।

আরও পড়ুন…বাংলাদেশেকে ৫শ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক

সিরাজগঞ্জ: কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস সিরাজগঞ্জের খালকুলা এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পেছন থেকে অপর একটি ট্রাক ওই বাস ও ট্রাককে সজোরে ধাক্কা দেয়। সিরাজগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন জানান, এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। আহত হন পাঁচজন।

ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুরে ট্রাকের ধাক্কায় লোকমান হোসেন (৮০) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হন আরও ৪ জন। সকালের এ দুর্ঘটনায় নিহত লোকমান হোসেন কালীগঞ্জ উপজেলার খোসালপুর গ্রামের বাসিন্দা। কালীগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মেজবাহ উদ্দিন এ তথ্য জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার উজানিসায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন (৪৫) ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক চাঁন মিয়া (৫০) নিহত হন। এ ঘটনায় চারজন আহত হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ এমরান এ তথ্য জানান।

আরও পড়ুন…রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বাড়ছে

গাজীপুর: গাজীপুরের পূবাইলে আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। ভোরে পূবাইলের কলেজ গেট এলাকায় ট্রাক-লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে লেগুনার এক যাত্রী নিহত হন। আহত হন ৭ যাত্রী। অপরদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুকুন্দিরবাগ এলাকায় দুই অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত হন আরেক যাত্রী।

নিহতরা হলেন শেরপুর জেলার মাঝপাড়া থানার গোলাম রাব্বানীর ছেলে মনিরুজ্জামান মনির (৩৮) ও নরসিংদী জেলার মনোহরদি থানার কেরানিনগর গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে ইব্রাহিম হোসেন (৩৩)। রাজশাহী: রাজশাহীর মোহনপুরে বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।

হবিগঞ্জ: ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জের রুস্তমপুর টোল প্লাজার কছে বাসচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিনযাত্রী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন দুজন। নিহতরা হলেন- নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বেতাপুর গ্রামের আবুল হোসেন চৌধুরীর স্ত্রী বকুল বেগম (৬২), কচি মিয়া চৌধুরীর ছেলে এহিয়া চৌধুরী জাবেদ (২৪) ও দৌলপুর গ্রামের অটোরিকশা চালক রব্বান মিয়া(৪০)।

সড়ক নাকি মৃত্যুর উপত্যকা?
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৭১টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬ হাজার ২৮৪ জন এবং আহত হন সাত হাজার ৪৬৮ জন। নিহতদের মধ্যে ৮০৩ জন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী।

এই ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে সাড়ে ১৩ শতাংশ আর মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এছাড়াও, ২০২০ সালে ৪ হাজার ১৯১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হন ৬ হাজার ৬৮৬ জন। আর আহত হন ৮ হাজার ৬০০ জন।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ৪ হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় ৭ হাজার ৩৯৭ জন নিহত হন। আর আহত হন ১৬ হাজার ১৯৩ জন। ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হন ৭ হাজার ২১৪ জন। আর আহত হন ১৫ হাজার ৪৬৬ জন।

আরও পড়ুন…ব্ল্যাক হক সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, নিহত ১৪

২০১৯ সালে ৫ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হন ৭ হাজার ৮৫৫ জন। আর আহত হন ১৩ হাজার ৩১৩ জন। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ৬ বছরে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ হাজার ৮৫৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮৯ হাজার ৮৬ জন।

সড়কগুলো কেন বিপজ্জনক?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, অতিরিক্ত গতির কারণে ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মোটরসাইকেলের আধিক্য এবং ছোট যানবাহনের চলাচল বেড়ে যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা আরও বাড়ছে। তাছাড়া মোটরসাইকেলে হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করা, গতিনিয়ন্ত্রণ এবং চালকের লাইসেন্স থাকার বিষয়গুলোতে নজরদারি না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে।

মহাসড়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ছোট অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা সরকার দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এছাড়া গত এক দশকে কোনো রকম বাছবিচার ছাড়াই মোটরসাইকেলের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের রাস্তাঘাট সীমাহীনভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। সূত্র : সময় টিভি নিউজ

ইবাংলা/টিএইচকে/১৭জুলাই,২০২২

Contact Us