পোশাক শালীনতার প্রতীক। এতে সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের প্রভাব ফুটে ওঠে। শরীর আবৃত করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে বনী আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার উদ্দেশ্যে আমি তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ অবতীর্ণ করেছি। আর সংযমশীলতার পরিচ্ছদই সর্বোৎকৃষ্ট। এ হল আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম; যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত-২৬)
পোশাক মানব জাতির একটি সহজাত প্রবৃত্তি ও প্রয়োজন। তাই যখন হজরত আদম ও হাওয়া আ.-এর শরীর থেকে যখন জান্নাতের পোশাক খুলে যায়, তাৎক্ষণিক তারা জান্নাতের গাছের পাতায় নিজেদের শরীর ঢেকে নেন। পোশাক পরিধানের ব্যাপারে বিভিন্ন হাদিসে রাসূল (সা.) বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন কোনো নতুন কাপড় পরিধান করতেন তখন আল্লাহর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এই দোয়া পাঠ করতেন, ‘আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু কামা কাসাওতানিহি, আসআলুকা খইরাহু ওয়া খইরা মা সুনিআ লাহু, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহি ওয়া শাররি মা সুনিআ লাহু।’ অর্থ- ‘হে আল্লাহ! তোমারই প্রশংসা। তুমিই আমাকে এই পোশাক পরিয়েছ। আমরা তোমার কাছে এই কাপড়ের কল্যাণ ও উপকারিতা প্রার্থনা করি এবং এর অকল্যাণ ও অপকারিতা থেকে তোমার আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৭৬৭)
পোশাক যাতে এমন না হয়, যা পরিধান করার পরও মানুষের সতর অন্যের কাছে প্রকাশ হয়ে যায়। কারণ সতর প্রকাশ করা ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক গুনাহ। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো পুরুষ অপর পুরুষের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না এবং কোনো নারী অন্য নারীর লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না। (মুসলিম, হাদিস : ৬৬৫)
ইসলামে এমন পোশাক পরা নিন্দনীয়, যা পরার পরও মানুষের দেহাবয়ব ফুটে ওঠে। ইসলামে আঁটসাঁট পোশাক পরা থেকে বিরত থাকার নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জাহান্নামবাসী দুই প্রকার মানুষ, আমি যাদের (এ পর্যন্ত) দেখিনি। একদল মানুষ, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা লোকজনকে মারবে এবং একদল স্ত্রী লোক, যারা কাপড় পরিহিত উলঙ্গ, যারা অন্যদের আকর্ষণকারিণী ও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। ওরা জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না। অথচ এত এত দূর হতে তার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৪৭৫)
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) অভিসম্পাত করেছেন ওই পুরুষকে যে নারীর পোশাক পরে এবং ওই নারীকে যে পুরুষের পোশাক পরে। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৯৮) বিধর্মীদের অনুকরণে পোশাক পরিধান করা নাজায়েজ। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি অমুসলিমদের পোশাক পরবে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (তবারানি আওসাত, হাদিস: ৩৯২১)
অহংকার বা মানুষ দেখানোর মানসিকতা সর্বাবস্থায় সকল কাজেই নিন্দনীয়। পোশাক-পরিচ্ছদের মাধ্যমেও যেন এই ব্যাধি মানুষের অন্তরে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়েও হাদিস শরিফে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অহংকারবশত মাটিতে কাপড় টেনে টেনে চলে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না (রাগান্বিত থাকবেন)। (বুখারি, হাদিস: ৫৭৯১)
ইবাংলা/জেএন/২০ আগস্ট,২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.