স্কুল শিক্ষকরা এমপিও পেলেন বঞ্চিত হলো মাদ্রাসা

ইবাংলা প্রতিবেদন

কারিগরি শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে দেশের ৬৪০টি স্কুল ও মাদ্রাসায় ভোকেশনাল কোর্স চালু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

কেনা হয়েছে ২শ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। মাধ্যমিক শিক্ষা খাত বিনিয়োগ কর্মসূচির (সেসিপ) মাধ্যমে এসব সংস্থান করা হয়। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। তাদের পড়ানোর জন্য সরকারিভাবে প্রায় ১১ মাস আগে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়।

আরও পড়ুন…তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান

কিন্তু তাদের মধ্যে মাদ্রাসার শিক্ষকদের নীতিমালার দোহাই দিয়ে সরকারি বেতনভাতা বা এমপিও দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে একধরনের মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলছেন, তাদেরকে নিয়োগের আগেই বেতনভাতা সংস্থান করা হয়। এর অনুকূলে স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য একই দিনে অর্থ মন্ত্রণালয় টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

আরও পড়ুন…কোম্পানীগঞ্জে ভাসানচর পালিয়ে আসা ১৮ রোহিঙ্গা আটক

ইতোমধ্যে স্কুলের শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিএমই) কারণে শিক্ষকরা বিনা বেতনে চাকরি করছেন। পাশাপাশি বেতনের জন্য তারা দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

এর আগে সেসিপের স্কুলের শিক্ষকদের যোগদান নিয়েও জটিলতা তৈরি করা হয়েছিল।জানতে চাইলে সেসিপের যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালক অধ্যাপক শামসুন্নাহার শনিবার যুগান্তরকে বলেন, কর্মসূচির আওতায় প্রতি উপজেলায় ১০টি করে স্কুল ও মাদ্রাসায় ভোকেশনাল শিক্ষা চালু করা হয়।

আরও পড়ুন…লড়াই বন্ধ করলে ইউক্রেন আর ইউক্রেন থাকবে না

মোট ১০টি ট্রেড কোর্স থেকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ২টি করে (ট্রেড) চালু করেছে। পরে যেখানে যে ট্রেড চালু করা হয়েছে, সেখানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কাছে

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠানো প্রস্তাব অনুযায়ীই শিক্ষকরা নিয়োগ পেয়েছেন। এমনকি সাধারণ ভোকেশনাল কোর্সের মতোই সেসিপের শিক্ষকদের একই রকম পদবি ও শিক্ষাগত যোগ্যতা। কিন্তু জনবল কাঠামোতে নেই বলে তারা এমপিও পাচ্ছেন না।

আরও পড়ুন…ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা তরুণীকে মারধর: ইউপি সদস্যের তিন ছেলে গ্রেফতার

তবে এ নিয়ে কাজ চলছে। খুব দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।স্কুল ও মাদ্রাসায় চালু করা ট্রেডগুলো হচ্ছে-সিভিল কনস্ট্রাকশন, কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি, ফুড প্রোসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন, জেনারেল ইলেকট্রনিক্স, প্লামবিং অ্যান্ড পাইপ ফিটিং, রেফ্রিজারেটর অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং, ড্রেস মেকিং, জেনারেল মেকানিকস

এবং ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন। এগুলোর জন্য সর্বমোট ১ হাজার ১৯৯টি পদে শিক্ষক নিয়োগ করার কথা। ২০২০ সালে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রথমে কিছু শিক্ষক নিয়োগ করা হয়।

আরও পড়ুন…স্কুলে আগুন দিলেন যুবক

পরে চাহিদা অনুযায়ী এনটিআরসিএ গত বছরের ৫ আগস্ট নিয়োগে আবার গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। প্রথমে ৪৬৮টি স্কুলের ৬৮৮টি পদে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। কিন্তু সব পদে প্রার্থী পাওয়া যায়নি। এরপর ৭ ডিসেম্বর আরেক বিজ্ঞপ্তিতে ১৬০টি প্রতিষ্ঠানের ১৯৩ পদে ফের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

তিনটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিভিন্ন মাদ্রাসায় ১০২ জন ট্রেড ইনস্ট্রাকটর নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। সুপারিশপ্রাপ্তরা সব নিয়ম মেনে পুলিশ ভেরিফিকেশনের পরই নিয়োগ পান।

আরও পড়ুন…প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে চা শ্রমিকদের উল্লাস,শ্বতস্ফূর্তভাবে কাজে ফেরার ঘোষণা

পরে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসা প্রধানের সুপারিশের মাধ্যমে তারা এমপিওর জন্য আবেদন করেন। কিন্তু এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে এই পদের উল্লেখ নেই-এমন কারণ দেখিয়ে আবেদন এখন পর্যন্ত তিনবার গণহারে ‘রিজেক্ট’ করা হয়েছে। অথচ একই পদে যোগ দিয়ে স্কুলের শিক্ষকরা এমপিও পাচ্ছেন।

বেতনভাতাবঞ্চিত এসব শিক্ষক সেসিপ মাদ্রাসা ট্রেড-ইনস্ট্রাকটর কেন্দ্রীয় ফোরামের ব্যাপারে আন্দোলন করছেন। সংগঠনের সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন জানান, সেসিপ কেবল পিছিয়ে পড়া স্কুল ও মাদ্রাসা এই ট্রেড চালু করেছে।

আরও পড়ুন…খুনি শনাক্ত থুতুতে

যারা এসব প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, তারা নিজের বাসাবাড়ি ছেড়ে দূর-দূরান্তে পদায়ন পেয়েছেন। এদের মধ্যে অনেক নারী ও দরিদ্র শিক্ষক আছেন যাদের ধার-দেনা করে এক মাসের বেশি বিনা পয়সায় চাকরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এমপিও না হওয়ায় কঠিন বাস্তবতার মধ্যে পড়েছেন তারা।

দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি বাসা ভাড়াও বেড়েছে। এ অবস্থায় আর বেশি দিন পাঠদান করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন,

আরও পড়ুন…বিএনপি’র বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা

বিদ্যমান ভোকেশনাল কোর্সের শিক্ষকদের মতো পদ হওয়া সত্ত্বেও মাদ্রাসার সেসিপের শিক্ষকদের এমপিও না পাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে নীতিমালায় তারা অন্তর্ভুক্ত নন। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এসব পদ নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ

নেওয়া হয়েছে। তবে কতদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে, তা তিনি জানাতে পারেননি।

ইবাংলা/তরা/২৮ আগস্ট ২০২২

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us